বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা থেকে রহস্যজনকভাবে পলাতক হওয়া ডিআইজি এহসান উল্যাহ বরিশালেও বহুমুখী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এহসানের নির্দেশে ২০১৫ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কবির হোসেন রনিকে ক্রসফায়ার দেওয়া হয় এবং নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যসহ অনুরূপ কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন তিনি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা থেকে রহস্যজনকভাবে পলাতক হওয়া ডিআইজি এহসান উল্যাহ বরিশালেও বহুমুখী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বরিশাল জেলার সাবেক পুলিশ সুপার এহসানের নির্দেশে ২০১৫ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কবির হোসেন রনিকে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়। সেই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় বরিশাল-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহসহ রাজনৈতিক ও পুলিশ প্রশাসনের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিহত রনির ছেলে আশিকুর রহমান আসিফ (২০) বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
সূত্র জানিয়েছে, ওই মামলায় সাবেক সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, বরিশাল রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি মো. হুমায়ুন কবির, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আকরাম হোসেন, বরিশালের সাবেক পুলিশ সুপার মো. এহসান উল্যাহ, সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক, আগৈলঝাড়া থানার সাবেক ওসি মনিরুল ইসলামসহ স্থানীয় অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। সরকার পরিবর্তনের পরে ৮ অক্টোবর বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এবং আগৈলঝাড়া থানা পুলিশকে রুজু করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, মামলার অন্যতম আসামি ও বরিশালের সাবেক পুলিশ সুপার এহসান উল্যাহ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা থেকে পালিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে তার জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করার চেষ্টা হয়। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকার নিশ্চিত করতে পারেনি।
পুলিশের নিরাপত্তা চৌহদ্দি থেকে তার পলায়নের ঘটনায় নিহত ছাত্রদল নেতা রনির পরিবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের মধ্যে আনার দাবি জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করে বলেছে, ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নবীনগর এলাকা থেকে ছাত্রদল নেতা রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আটক রেখে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয় এবং একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটায় আগৈলঝাড়া উপজেলার বাইপাস ব্রিজের পশ্চিম পাশে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর ঘটনাটিকে ‘ক্রসফায়ার’ বলে প্রচার করা হয়।
রনির ছেলে সিয়াম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার বাবা বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে খুন করা হয়েছে। তখন আসামিদের ভয়ে মামলা করতে পারিনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। মামলার আসামি এহসান উল্যাহর পালিয়ে যাওয়া হতাশাজনক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য লজ্জাকর।’
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, বরিশালে এসপি থাকাকালে এহসান উল্যাহ আওয়ামী রাজনীতির ইশারায় বিরোধী মত দমনে কাজ করেছেন। নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপরাধেও তিনি জড়িত ছিলেন। তৎকালীন রেঞ্জ ডিআইজি হুমায়ুন কবির এসব কাজে তাকে প্রশ্রয় দেন।
কিছু বছর পর অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে বরিশাল রেঞ্জে যোগ দিয়ে তিনি আবারও বদলি বাণিজ্যসহ অনুরূপ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন। সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে তাকে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ভূমিকায় দেখা গেছে।
বরিশালের আলোচিত ছাত্রদল নেতা খুনের মামলার আসামি হয়েও এক বছর ধরে গ্রেপ্তার না হওয়া এবং সর্বশেষ পলায়নের ঘটনায় পুলিশি গাফিলতির প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. অলিউল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাদী মামলাটি পরিচালনা করতে চাননি। নির্বাহী আদেশে তদন্ত শেষে আদালতে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। এখানে থানা পুলিশের গাফিলতির সুযোগ নেই।’
এহসান উল্যাহর পলায়ন প্রসঙ্গে পুলিশ একাডেমির পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত বুধবার থেকে তিনি একাডেমিতে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাকে আটক করতে ঢাকা থেকে একটি টিম এসেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এখন তাকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                    -20251031233315.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031164732.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251031234404.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন