সোমবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৬:০৭ পিএম

পা দিয়ে লিখে জিপিএ ৪.৩৮ পেলেন তাওহীদ ইসলাম

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৬:০৭ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই, কিন্তু আছে ইস্পাতের মনোবল এবং অটল ইচ্ছাশক্তি। প্রতিবন্ধিতা কোনো বাধা নয়; সামান্য যত্ন ও উৎসাহ একজন শিশুর জীবন পাল্টে দিতে পারে। এমন একজন টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে তাওহীদ ইসলাম। দুটি হাত ছাড়া জন্ম নেওয়া তাওহীদ ইসলাম এ বছর কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় (বিএমটি) অংশ নিয়ে পা দিয়ে উত্তরপত্র লিখে জিপিএ ৪.৩৮ পেয়েছেন।

তাওহীদের এই অসাধ্যকে সম্ভব করার মূল কারিগর ছিলেন তার মা, রত্না বেগম। ভবিষ্যতে সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা তার। তাওহীদ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিগর ইউনিয়নের গারট্ট গ্রামের ফজলুল হক ও রত্না খাতুনের দ্বিতীয় পুত্র।

তাওহীদের মা রত্না আক্তার জানান, ‘আমি শিশুকাল থেকেই ঘরের কাজের ফাঁকে তাওহীদকে বর্ণমালা শেখাতে শুরু করি। তার বুদ্ধিমত্তা ও শেখার আগ্রহ দেখে তাকে পা দিয়ে লিখতে শিখিয়েছি। সাত বছর বয়সে তাকে ঘর থেকে আট কিলোমিটার দূরে ঘাটাইলের চান্দুসি প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলাম। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক রফিকুল বারী খান নিজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। প্রতিদিন বাড়ি থেকে অনেক দূর থাকা সত্ত্বেও আমি তাওহীদকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমার সমস্ত শক্তি ও প্রচেষ্টা নিয়োগ করতাম, কারণ বিশ্বাস করতাম যে তার পড়াশোনায় সাফল্যের সম্ভাবনা আছে। সেই সময় আমি প্রতিদিন বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার হেঁটে নিকটবর্তী কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে যেতাম, তারপর বাস বা তিন চাকার গাড়িতে সাত কিলোমিটার ভ্রমণ করে তাওহীদকে স্কুলে নিয়ে যেতাম।’

মায়ের কঠোর পরিশ্রম এবং পরিবার ও স্কুলের অধ্যক্ষ রফিকুল বারী খানের সমর্থনে তাওহীদের সাফল্য আসতে শুরু করে। দক্ষিণ ঘাটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে সে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ৪.২৫ জিপিএ অর্জন করে। পরে কদমতলী হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে এসএসসি পাস করে একই জিপিএ পায়।

কদমতলী স্কুলের শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘তাওহীদ তার পড়াশোনায় মনোযোগী এবং পা দিয়ে দ্রুত লিখতে পারে। আমরা শিক্ষকরা তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করেছি। আমাদের স্কুল থেকে সাফল্যের সাথে পড়াশোনা শেষ করার পর তাকে কলেজে ভর্তি করা হয়।’

কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজের শিক্ষক তারিক বলেন, ‘তাওহীদ এই বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন যে প্রতিবন্ধিতা কোনো বাধা নয়। সঠিক যত্ন ও সামান্য অনুপ্রেরণার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুরাও উন্নতি করতে পারে এবং তাদের পরিবার ও সমাজে অবদান রাখতে পারে।’

তাওহীদের বাবা ফজলুল হক, যিনি পরিবারের ভরণপোষণের জন্য বাড়ির কাছে একটি ছোট চায়ের দোকান চালান। তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমার ছেলে শিক্ষিত হয়ে সমাজে সম্মানের সাথে বসবাস করতে পারে।’

তাওহীদ বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতে সরকারি চাকরি করতে চাই, অফিসে বসে কম্পিউটারের কাজ করতে চাই, তবে নিশ্চিত নই যে একটি দরিদ্র পরিবারে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারব কি না। আমি চেষ্টা করব একটি চাকরি পাওয়ার। যদি আয় করতে পারি, তাহলে পরিবারের জন্য অবদান রাখব।’

Link copied!