মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ০২:৪২ পিএম

পরিবেশ বিপর্যয়ে বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখি, হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ০২:৪২ পিএম

আগৈলঝাড়ায় সাহেবেরহাট ঘুরে বাবুই পাখির এমন জীবন চিত্র দেখা গেছে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আগৈলঝাড়ায় সাহেবেরহাট ঘুরে বাবুই পাখির এমন জীবন চিত্র দেখা গেছে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গ্রামবাংলার মাঠের ঐতিহ্য হলো বাবুই পাখির বাসা। আর আজ সেই বাবুই পাখিই হারিয়ে যেতে বসেছে। তালের পাতায় নিপুণ কারুকার্য করে বাবুই পাখি তার অপরূপ সৌন্দর্যের বাসা তৈরি করে। একসময় প্রকৃতিতে আধিপত্য বিস্তার করা এ পাখিগুলো আজ কালের বিবর্তনে বাংলার চিরচেনা সবুজ প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে।

বাংলার বিভিন্ন স্থানে তালগাছের পাতায় মেধা ও পরিশ্রম খাটিয়ে নিজেদের আবাসস্থল গড়ে তুলত বাবুই পাখি। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, নতুন বনায়নে বাসযোগ্য পরিবেশের অভাব, নির্বিচারে তাল ও নারিকেলগাছ কাটার কারণে সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি এই বাবুই পাখি ও তাদের দৃষ্টিনন্দন বাসা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।

গ্রামবাংলায় একসময় উঁচু গাছের ডালে সুনিপুণভাবে বাবুই পাখি বাসা তৈরি করত। পথিক মুগ্ধ নয়নে তাঁতিদের মতো সুনিপুণ শিল্পকর্মে গড়া এ পাখির বাসার দিকে চেয়ে থাকত। এ পাখিকে ভালোবেসে অনেকে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও নাম রেখেছেন এ পাখির নামে।

কালের বিবর্তনে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা থেকে আজ এই বাবুই পাখির বাসা প্রায় বিলুপ্ত। এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শন নয়, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাত এবং আত্মনির্ভরশীল হতে উৎসাহ দিত। কিন্তু পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে পাখিটি আমরা হারাতে বসেছি।

এখন আর আগের মতো দেখা যায় না বাবুই পাখির বাসা। গ্রামাঞ্চলের সড়কপথে নেই সারিবদ্ধ তাল ও নারিকেলগাছ—যা ছিল বাবুই পাখির প্রধান বসবাস যোগ্য স্থান। নারিকেল পাতা, তালের পাতা, লম্বা শক্ত ঘাস—এসবের সমন্বয়ে একটি তাল বা নারিকেল গাছে তিন ধরনের বাসা নির্মাণ করত বাবুই পাখি। এর মধ্যে একটি বসবাসের জন্য, একটি ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটানোর জন্য এবং আরেকটি খাবার সংরক্ষণের জন্য। বাসা নির্মাণের ক্ষেত্রে তারা সাধারণত তাল ও নারিকেলগাছই বেশি বেছে নিত।

এই বাসা যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি খুব মজবুতও। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ছিঁড়ে পড়ে না। পুরুষ বাবুই পাখি বাসা নির্মাণ শেষ হলে সঙ্গী খুঁজতে বের হয়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে আকর্ষণ করার জন্য খাল, বিল বা ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালে ডালে নেচে বেড়ায়। বাবুই পাখির একটি বৈশিষ্ট্য হলো—রাতে ঘর আলোকিত করতে বাসার ভেতর এক চিমটি গোবর রেখে তার ওপর জোনাকি পোকা বসিয়ে রাখা হয়, আর সকাল হলে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশি বাবুইকে প্রায়ই ফসলের খেতে দেখা যায়। অনেকেই ধারণা করেন, পাখিটি ফসল খায়। কিছু ফসল হয়তো খায়ও, তবে ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড়ই এর প্রধান খাদ্য। ফলে কৃষকের ক্ষতির চেয়ে উপকারই বেশি করে থাকে।

প্রজনন ঋতুতে একসময় পাখির কিচিরমিচির শব্দে গ্রামের মানুষের ঘুম ভাংত। কিন্তু এখন সে শব্দও আর শোনা যায় না। বাসস্থান সংকটের কারণে এ পাখি ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

এখন আমাদের উচিত বেশি করে তাল ও খেজুরগাছ লাগানো। তালগাছ হলে বজ্রপাতের ক্ষতি থেকে নিরাপদে থাকা যায়, আর খেজুরগাছ হলে রস ও গুড়ের চাহিদাও মিটে যায়। শুধু বাবুই নয়, জাতীয় পাখি দোয়েলসহ চড়ুই, শালিক, চিল, কাক, কোকিলসহ আরও বহু পাখিই আজ অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এখনই পাখি সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে এসব পাখি হয়তো প্রকৃতি থেকে বিলীন হয়ে যাবে।

আগৈলঝাড়া উপজেলা সহকারী বন কর্মকর্তা কালিপদ পুইস্তা বলেন, ‘আসুন, আমরা সম্মিলিতভাবে এই প্রাকৃতিক শিল্পকর্মকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করি।’ তার মতে, সরকার, পরিবেশবিদ ও সাধারণ মানুষকে একসঙ্গে কাজ করে বাবুই পাখি ও তাদের শৈল্পিক বাসা রক্ষা করতে হবে।

Link copied!