পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে তালগাছ। আগের দিনে রাস্তার দুপাশে, পুকুর পাড়ে, ভিটায় ও বসতবাড়ির আশপাশে সারি সারি তালগাছ দেখা যেত। রসাত্মক ফল, শাঁস বাঙালির প্রতিঘরে সববয়সের মানুষের প্রিয় খাবার ছিল। অপরদিকে তালগাছ দিয়ে ডোঙা নৌকা তৈরি করে বর্ষার মৌসুমে যাতায়াত করা হতো। ঘর তৈরিতেও ছিল তালগাছের কদর।
নব্বই দশকে দুমকির লেবুখালী, জামলা, আঠারোগাছিয়া, পাংগাশিয়া, আলগী, মুরাদিয়া, জলিশা, কদমতলা, শ্রীরামপুর, সাতানীসহ বিভিন্ন এলাকায় তালগাছের বাগান ছিল। এ বাগানগুলো থেকে প্রতিবছর তাল বিক্রি করে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত। এখন তারা অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে তাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা খাওয়ার ধুম ছিল। বর্তমান প্রজন্মের সন্তানরা এসব চেনেই না।
দুমকিতে বর্ষার মৌসুমে আঠারোগাছিয়া বিল, কার্তিক পাশার বিল দিয়ে নৌকার পরিবর্তে তালগাছের তৈরি ডোঙাতে যাতায়াত করত মানুষ, এখন তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বৃদ্ধ ফোরকান মৃধা বলেন, ছোটবেলায় বাবাকে দেখতাম প্রতিবছর তালের বিচি রাস্তা ও বাড়ির ভিটায় লাগাত আর বলত এগুলো বড় হলে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ঘর নির্মাণে তালগাছের দউর-পাইড়-রুয়া ছিল অনেক মজবুত। সকলেই ঘর তুলতে তালের আড়া, পাইড় ও রুয়া ব্যবহার করত। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও কালের বিবর্তনে এখন অনেকেই তালগাছের ব্যবহার করে না বললেই চলে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, যে হারে তালগাছ নিধন করা হচ্ছে সেভাবে রোপণ করা হচ্ছে না। তাই রোজ রোজ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তালগাছ। তালগাছ পরিবেশবান্ধব। বজ্রপাত থেকে রক্ষার অন্যতম একটি উপায় বেশি বেশি তাল বীজ রোপন করা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকার কৃষক এবং কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা সরকারিভাবে তালের চারা বিতরণ করেছি। তাছাড়া কৃষকদের উঠান বৈঠকের মাধ্যমে আমিসহ কর্মকর্তারা তালের বীজ রোপণের জন্য সচেতনতামূলক সভাসহ জনগণকে তাল বীজ বপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করে আসছি। তিনি বলেন, তালগাছ বিলুপ্ত হওয়ার কারণে প্রতিবছর বজ্রপাতে কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার লোক মৃত্যবরণ করে। বজ্রপাত থেকে রক্ষার একটি উপায় তালগাছ রোপণ করা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন