তিনদিন আগে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। এরপর আশরাফুলকে যতবারই তার স্ত্রী লাকী বেগম ফোন করেন, সেটা রিসিভ করেন জরেজ। স্বামীর খোঁজ করলেই তাকে অন্যপ্রান্ত থেকে জানানো হতো, আশরাফুল ব্যস্ত আছেন।
তিন দিন আগে অসুস্থ বাবাকে রংপুরের হাসপাতালে রেখে বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে ঢাকায় আসেন কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। কিন্তু ঢাকায় আসার পর থেকে তার স্ত্রী লাকী বেগম যতবারই ফোন করেছেন, সেটি রিসিভ করেছে জরেজ। স্বামীর খোঁজ চাইলে তিনি প্রতিবারই শুনেছেন, ‘আশরাফুল ব্যস্ত আছেন।’
স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত থানায় গেলে লাকী বেগম জানতে পারেন ঢাকায় খণ্ডিত মরদেহ পাওয়া গেছে তার স্বামীর।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে নীল রঙের দুটি ড্রামের ভেতর থেকে ২৬ খণ্ডে বিভক্ত এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে পরিচয় নিশ্চিত না হলেও পরে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশ্লেষণে শনাক্ত করে—এটি আশরাফুল হকের মরদেহ।
নিহতের শ্যালক আব্দুল মজিদ বলেন, মঙ্গলবার অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে মালয়েশিয়া ফেরত বন্ধু জরেজের সঙ্গে ঢাকায় আসেন আশরাফুল। বুধবার বিকেল ৫টায় বোনের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। এরপর আর যোগাযোগ করা যায়নি। তাই বৃহস্পতিবার বিকেলে বদরগঞ্জ থানায় জিডি করতে গেলে জানতে পারেন আশরাফুল ঢাকায় খুন হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে থেকে ফোন করলে জরেজই ধরে। বলে—‘আশরাফুল ব্যস্ত, কালেকশনে গেছে’। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফোন দিলে জরেজ জানায়, আশরাফুলের ফোন নাকি ড্রেনে পড়ে গিয়েছিল। এতে সন্দেহ বাড়লে আমার বোন জরেজের স্ত্রীর কাছে যায়। পরে থানায় এসে জানতে পারি আশরাফুলের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তখনই বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। আমরা হত্যাকারীর কঠোর শাস্তি চাই।
বদরগঞ্জ থানার ওসি একেএম আতিকুর রহমান বলেন, নিহতের স্ত্রী ও স্বজনেরা থানায় এসেছিলেন। তাদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য ঢাকার রমনা ও শাহবাগ থানাকে দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে এবং পরিবারও সেখানে যাচ্ছে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আশরাফুল হক হিলি থেকে কাঁচামাল কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি বিক্রি করতেন। আর তার বন্ধু জরেজ মিয়া শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা; তিনি দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকার পর দেশে ফেরেন। আশরাফুলের কাছ থেকে তিনি মোটা অঙ্কের ঋণ চাইছিলেন।
গ্রামবাসী জানান, আশরাফুল সহজ-সরল স্বভাবের মানুষ ছিলেন। দরিদ্র-অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে সামাজিক-ধর্মীয় কার্যক্রমেও তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও পরিচিতরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে জমির রেজিস্ট্রির জন্য ওয়ারিশ সনদ নেন। সন্ধ্যায় স্থানীয় মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। পরে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে রাতেই বন্ধু জরেজের সঙ্গে ঢাকায় রওনা হন।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল হক (৪২) ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ-আলু আমদানির ব্যবসা করতেন। তার সরকারি লাইসেন্সও ছিল।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন