মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম

শিক্ষার আলো জ্বালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত লড়তে হয় নদী-স্রোত-কাদামাটির সাথে

সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম

এভাবেই পানি-কাদা মাড়িয়ে শিক্ষার আলো জ্বালাতে যান তারা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

এভাবেই পানি-কাদা মাড়িয়ে শিক্ষার আলো জ্বালাতে যান তারা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ফরিদপুরের সদরপুরে পদ্মানদীবেষ্টিত দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে অবস্থিত ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ জন শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দুর্যোগ-দুর্দশা উপেক্ষা করে প্রতিদিনই স্কুলে পৌঁছাতে তাদের লড়াই করতে হচ্ছে নদী, স্রোত, কাদামাটি আর চরম দুর্ভোগের সঙ্গে।

চরাঞ্চলের এসব বিদ্যালয়ে যেতে শিক্ষকদের নদী পাড়ি দিতে হয় প্রায় এক ঘণ্টা সময় নিয়ে। ঝড়-বৃষ্টি, নদীর তীব্র স্রোত, নৌযানের অভাব—সব মিলিয়ে অনেক দিনই স্কুলে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। চরাঞ্চলে সড়ক-ঘাট না থাকায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়। পথে রয়েছে আরও দুটি খাল, যা নৌকা চালিয়ে পাড়ি দিতে হয়। কখনো সখনো সাঁতার কেটেও যেতে হয় গন্তব্যে।

এত ঝুঁকি নিয়েও শিক্ষকদের জন্য নেই কোনো চর ভাতা বা ঝুঁকি ভাতা। দুর্গম চরে আবাসনের সুযোগ নেই বলে প্রতিদিনই তাদের এমন কষ্টসাধ্য যাতায়াত করতে হয়। এতে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন বলে জানান শিক্ষকরা।

স্থানীয়রা জানান, শিক্ষকরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তে অনেক কষ্ট করেন, তা ভাষায় বোঝানো কঠিন। প্রতিদিন তাদের নদী, খাল আর কাদামাটি পেরিয়ে স্কুলে আসতে হয়। অনেক সময় ঝড়-বৃষ্টি বা নৌকার সংকটে তারা জীবন ঝুঁকি নিয়ে পথ চলেন। আমরা চাই সরকার এই এলাকার জন্য বিশেষ সুযোগ-অসুবিধার ব্যবস্থা করুক। এ ছাড়া যোগাযোগব্যবস্থার ব্যবস্থা করুক, যাতে শিক্ষকরা অন্তত একটু স্বস্তিতে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

কটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলে সড়ক-ঘাট না থাকায় প্রতিদিন ১০-১৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়। দু-তিনটি খাল নৌকা ছাড়া পার হওয়াই যায় না। অনেক সময় নদীর স্রোত এত বেশি থাকে যে স্কুলে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবুও আমরা বাচ্চাদের কথা ভেবে সব কষ্ট সহ্য করি। কিন্তু এই দুর্গম এলাকায় কর্মরত শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ভাতা ও বদলি প্রক্রিয়া সহজ করা জরুরি। নইলে এভাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা সত্যিই খুব কঠিন।

মোজাফফরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমি ইসলাম জানান, প্রতিদিন প্রায় এক ঘণ্টা নদীপথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। ঝড়-বৃষ্টি আর নদীর স্রোত আমাদের নিত্যসঙ্গী। দুর্গম চরের খালগুলোতে নৌকা না পেলে কাদামাটি ভেঙে হেঁটে যেতে হয়। তবুও নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এত ঝুঁকির মধ্যে কোনো চর ভাতা বা ঝুঁকি ভাতা নেই—এটা খুবই কষ্টদায়ক। অন্তত ন্যূনতম নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করা হলে আমরা আরও ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারতাম।

সদরপুর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুনুর রহমান বলেন, আমি নিজে ওই এলাকায় গিয়ে দেখেছি—প্রায় এক ঘণ্টার নদীপথ, তীব্র স্রোত আর নৌযানের সংকট শিক্ষকরা প্রতিদিন জীবন ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দেন। সড়ক-ঘাট না থাকায় ১০-১৫ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়, মাঝখানে দুটি খাল নৌকা বা কখনো সাঁতরে পার হতে হয়। এত ঝুঁকি সত্ত্বেও চর ভাতা বা ঝুঁকি ভাতা না পাওয়া সত্যিই দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য কাজ করছি।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!