মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কনকাপৈত গ্রামের যুবক মাছুম বিল্লাহ মজুমদার নিজেই তৈরি করেছেন মশা নিধনের ফগার মেশিন। তাঁর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ও সাফল্যের গল্প এখন পুরো উপজেলায় সাড়া ফেলেছে। প্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্ভাবন শুধু তাঁকে পরিচিতি দেয়নি, স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করেছে।
নারায়ণগঞ্জে চাকরির সুবাদে ভাড়া বাসায় থাকাকালীন সময়ে মাছুম বিল্লাহ মশার ব্যাপক উপদ্রবে চরম ভোগান্তিতে ছিলেন। বাজারে থাকা চায়না ফগার মেশিনের উচ্চমূল্য ও নিম্নমান তাঁকে নতুন চিন্তার দিকে নিয়ে যায়। কারিগরি পড়াশোনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি নিজেই ফগার মেশিন তৈরির উদ্যোগ নেন। প্রথমদিকে ব্যর্থতা এলেও প্রায় দুই বছরের প্রচেষ্টা শেষে তিনি সফল হন।
৩৩ বছর বয়সী মাছুম বিল্লাহ মৃত আবদুল হক মজুমদারের ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং চট্টগ্রামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইইইতে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন। দীর্ঘদিন চাকরি করার পর উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য চাকরি ছেড়ে দেন তিনি।
বর্তমানে তাঁর নিজ গ্রামের বাড়ির সামনে টিনশেড ঘরে ‘এম এইচ আই আলট্রা পাওয়ার মিনি ফগার মেশিন ফ্যাক্টরি’ নামে ছোট কারখানায় প্রতিদিন মেশিন তৈরি হচ্ছে। এখানে ছয়জন শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিদিন প্রায় ২০টি মেশিন উৎপাদন করা সম্ভব। এখন পর্যন্ত তিনি ৫০০টির বেশি মেশিন তৈরি ও বিক্রি করেছেন।

মাত্র ৬ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হওয়া তাঁর মিনি ফগার মেশিনটি দুই লিটার রাসায়নিক ও ২৫০ গ্রাম বিউটেন গ্যাসের বোতল ব্যবহার করে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট এলাকায় স্প্রে করতে সক্ষম। মেশিনের বডি এসএস স্টিল দিয়ে লেজার কাটিং প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়ায় এটি বেশি টেকসই। বাজারে সাধারণ চায়না পণ্যের দাম ১২-১৫ হাজার হলেও মাছুম বিল্লাহর মেশিন মানের দিক থেকে উন্নত এবং ব্যয় সাশ্রয়ী।
মাছুম বিল্লাহ বলেন, ‘কম খরচে উচ্চমানের ফগার মেশিন বানানোর লক্ষ্য নিয়েই শুরু করেছি। প্রথম দিকে কয়েকবার আগুন ধরে গেলেও হাল ছাড়িনি। আজকের সাফল্য সেই ধৈর্যের ফল। সামনে আরও বড় কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা আছে, যেখানে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করতে চাই।’
কনকাপৈত ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর হোসেন মীরু বলেন, ‘মাছুম বিল্লাহ আমাদের এলাকার গর্ব। নিজের দক্ষতা ও মেধা দিয়ে আধুনিক ফগার মেশিন তৈরি করা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা চাই তাঁর কারখানা আরও বড় হোক এবং সারা দেশে তাঁর উদ্ভাবিত মেশিন ছড়িয়ে পড়ুক।’
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্যোক্তা যুবকদের পাশে আমরা সবসময় দাঁড়াই। মাছুম বিল্লাহ যদি সহযোগিতা চান, অবশ্যই প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। এ ধরনের উদ্যোগ বেকারত্ব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
মশা নিধনে সাশ্রয়ী, কার্যকর ও স্থানীয়ভাবে তৈরি এই ফগার মেশিন ভবিষ্যতে চৌদ্দগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশাবাদ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন