রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জুয়েল হাসান, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ)

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৫, ১২:১৯ পিএম

খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত শৈলকুপার গাছিরা

জুয়েল হাসান, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ)

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৫, ১২:১৯ পিএম

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন এক গাছি। ছবি- সংগৃহীত

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন এক গাছি। ছবি- সংগৃহীত

শীতের আগমনী হাওয়ায় যখন বাংলার মাঠঘাট ধীরে ধীরে রঙ বদলাতে শুরু করে, মাটির গায়ে নেমে আসে নরম কুয়াশার চাদর—ঠিক তখনই গ্রামবাংলার এক চিরচেনা, আদিম দৃশ্য আবারও জীবন্ত হয়ে ওঠে। গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গাছিরা।

ঝিনাইদহের শৈলকুপার গ্রামের মানুষ জানে, এই সময়টায় প্রকৃতি যেন একটু ধীরে হাঁটে, আর মানুষের হৃদয় ফিরে যায় প্রাচীন গ্রামীণ রীতিতে। দিনের নানা সময়ে দেখা যায় গাছিদের পরিচিত যাতায়াত। ঘাড়ে-পিঠে পেঁচানো মোটা রশি, হাতে ধারালো ছ্যানদা, আর কোমরে ঝোলানো ঝুড়িতে বাঁশের নলি, টুকরা বাঁশ—এক অনড়, স্থির ছন্দে তারা ছুটে চলেন খেজুর গাছের দিকে। দৃশ্যটি যেন বাংলার শীতের প্রথম কবিতার মতো-সরল, স্বাভাবিক, অথচ গভীর অর্থবহ।

গাছিরা অবিশ্বাস্য দক্ষতায় খেজুর গাছের মাথায় উঠে শুরু করেন গাছ তোলার সূক্ষ্ম কাজ। খেজুর গাছের শরীরে ডালপালা কেটে নিখুঁতভাবে ছাল চেঁছে বসানো হয় ছোট বাঁশের নলি। সেই নলি বেয়ে ধীরে ধীরে ফোঁটা ফোঁটা ঝরতে থাকে মাটির মিষ্টি ঘ্রাণমাখা স্বচ্ছ রস, যা শীতের সকালের জাদুকরী পানীয়। রস ধরে রাখতে নিচে ঝুলানো হয় পরিষ্কার মাটির বানানো হাঁড়া–কলস। ঝুলতে থাকা সেই হাঁড়াগুলো যেন শৈলকুপার শীতের মৃদু সংগীত- শব্দহীন, তবু অন্তরে ছুঁয়ে যায়।

স্থানীয় গাছিরা বলেন, শীতের একদম প্রথম দিকে খেজুর রসের স্বাদই সবচেয়ে অনন্য। রস তখন থাকে বেশি পাতলা, বেশি ঘ্রাণময় এবং অপূর্ব স্বচ্ছ। তাই মৌসুমের শুরুতেই তারা সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেন গাছ প্রস্তুত করা, ছাল তোলা, নলি বসানো এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ঠিকঠাক রাখতে। শীত যত গভীর হয়, রসের ঘনত্ব ও স্বাদ ততই বাড়তে থাকে—প্রকৃতি যেন নিজ হাতে চিনি মিশিয়ে দেয়।

শুধু স্বাদ বা দৃশ্য নয়, খেজুর রস শৈলকুপার বহু পরিবারের জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেউ বিক্রি করেন টাটকা রস, কেউ তৈরি করেন লালচে রঙের সুমিষ্ট খেজুর গুড়—যা এই অঞ্চলের (যশোর) পরিচিত পণ্য। রাস্তার ধারের চায়ের দোকানেও পাওয়া যায় খেজুর রস, যা শীতের সকালকে আরও কোমল, আরও স্মৃতিময় করে তোলে।

শৈলকুপার খেজুর গাছের রস তাই শুধু খাদ্যপণ্য নয়, এটি গ্রামীণ জীবনের সংস্কৃতি, উত্তরাধিকার, আর নরম শীতের অনুভবকে বয়ে আনা এক নিঃশব্দ কবিতা। শীতের রাতে হাঁড়িতে ফোঁটা ফোঁটা করে জমতে থাকা রস যেন বারবার মনে করিয়ে দেয়- শীত এসেছে, আর সঙ্গে এনেছে বাংলার গ্রামীণ স্বাদের চিরন্তন যাদু।

Link copied!