স্বামী দীর্ঘ বছর শয্যাশায়ী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তিন মেয়ের মধ্যে একজন বাকপ্রতিবন্ধী আরেক মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কোনো কাজ করতে না পারায় সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। সংসারের দায়িত্ব পড়ে সুভাষিণী ওপর।
পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের লাকুরতলা গ্রামের এই নারী বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে সংসারের খরচ চালাচ্ছেন। শুধু তাই নয় ধান চাষ থেকে শুরু করে সবজি চাষও করছেন তিনি। গৃহস্থালি কাজ করেই ক্লান্তম তারপরও সংসারের দায়িত্ব কাঁধে সুভাষিণীর।
জানা যায়, পাথরঘাটা বাজারের পূর্ব মাথায় নারীদের জন্য সংরক্ষিত স্থান রয়েছে সেখানে সুভাষিণীর উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আসেন বিক্রির উদ্দেশ্যে। সুভাষিণী রাণী গ্রামীণ লোকশিল্প বাঁশ শিল্পের সঙ্গেও যুক্ত। তিনি বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন মাছ ধরার চাই, ঝুড়ি, কুলা, চালুনি, মাথালসহ কৃষিকাজে ব্যবহৃত নানা সামগ্রী। এসব সামগ্রী তিনি বাজারেও বিক্রি করেন। যদিও প্লাস্টিক সামগ্রীর আধিপত্যে বাঁশের চাহিদা কমে গেছে, তবুও তিনি চান প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশ এর তৈরি পণ্য এর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে। তিনি প্লাস্টিক পলিথিন এর ব্যবহার কমিয়ে যাতে ক্ষতিকর ব্যবহার রোধ করা যায় তার লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থা রূপান্তরের সাথে কাজ করেন।
কথা হয় সুভাষিণীর সাথে বলেন তার কষ্টের কথা। তার মনে তার কষ্টের কথা শোনার মতো কেউ নেই, শুনতেও চায় না কেউ।
তিনি বলেন, ৩ মেয়ে ১ ছেলে ২ মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্বামী গুনধর বারিক দীর্ঘদিন বছর ধরে অসুস্থ, কোনো কাজ করতে পারেন না। তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েই প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে ছোট মেয়ের সন্তানও প্রতিবন্ধী। এত কষ্টের মধ্যেও সংসারের হাল ধরতে হয়েছে আমাকে। কি আর করার জীবন চালাতে তো কাজ করতেই হবে।
অনেক কষ্ট করতে হয়। সকল থেকে সন্ধা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। কখনো মাঠে ঘাটে কখনো ঘরের আঙিনায় আবার কখনো বাঁশ দিয়ে তৈরি করতে হয় সাজি, ঝুড়িসহ নানা পণ্য। হাত, বুক ব্যথা হয়ে যায়। তারপরও সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। যা উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চলে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি কাজ ভালোভাবে আয়ত্ত করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই, পাশাপাশি বাঁশ দিয়ে তৈরি সরঞ্জাম তৈরির দক্ষতাকে আরও বৃদ্ধি করতে চাই। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিসিডিবির এনগেজ প্রকল্পের আওতায় বিকল্প উপায়ে জীবিকায়ন (ভার্মি কম্পোস্ট) এসকল প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমার কাজের প্রতি আগ্রহ, আত্মবিশ্বাস, মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে।
প্রকল্প সমন্বয়কারী অভিজিৎ মজুমদার রতন বলেন, সুভাষিণী রাণী এনগেজ প্রকল্প থেকে জলবায়ু সহনশীল কৃষি খামার প্রশিক্ষণ এবং বিকল্প উপায়ে জীবিকায়ন ভার্মি কম্পোস্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি কৃষি কাজ থেকে শুরু করে বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন। সুভাষিণী গ্রামের একজন উদাহরণ।