স্বাস্থ্যখাত সংস্কারসহ বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের গণ-অনশন কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা পৌনে ১২টার দিকে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে এই হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এ ঘটনায় আন্দোলনকারী ও শেবাচিমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং গোটা মেডিক্যাল কলেজ এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের তিন দফা দাবিতে মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে গত এক সপ্তাহ ধরে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ এবং তিন দিন ধরে শেবাচিম হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা অনশন চালিয়ে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে আরও তিন শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেন।
জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন আন্দোলনকারী জরুরি বিভাগের এক কর্মীকে লাঞ্ছিত করেন এবং ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে হাসপাতালের কর্মচারীরা। তারা বিক্ষোভে নামলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কর্মচারীদের চাপের মুখে আন্দোলনকারীরা দ্রুত সরে যান। এ সময় আন্দোলনকারীদের একজনকে ধাওয়া করে মারধরের ঘটনাও ঘটে। সংগঠক মহিউদ্দিন রনি তখন ঘটনাস্থল থেকে সরে যান। পরে হাসপাতালের কর্মচারীরা বান্দরোডে বিক্ষোভ করে এবং রনির বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন।
হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করেন, ১৫ দিন ধরে আন্দোলনের নামে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। মূল ফটকের সামনে অনশনের কারণে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও আন্দোলনকারীদের একটি অংশ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা স্টাফদের মারধর ও চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। এ কারণে আমরা প্রতিবাদে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছি।
এ ঘটনায় দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শেবাচিম এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এই হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠক মহিউদ্দিন রনি। বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে তিনি বরিশাল অশ্বিনী কুমার হলের সম্মুখে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ‘আন্দোলন চলছে, চলবে। পূর্বে তিনটি দাবির স্বপক্ষে আন্দোলন হলেও এখন থেকে আরও একটি বেড়ে গেছে। নতুন দাবি হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এবং এই ঘটনায় পুলিশের সহযোগিতায় নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ‘হাসপাতালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।’
১৭ দিন ধরে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে বরিশালে নানা কর্মসূচি চলছে। আন্দোলনকারীরা সাত দিন মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় ২৯ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ রাখেন, এতে সাধারণ যাত্রী ও চালকেরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন