ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

‘৩৬ জুলাই সেতু’ নামফলক ভাঙচুর, তিন শতাধিক ব্যক্তির নামে মামলা

বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৬:০৭ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বরিশালের মুলাদীর আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নির্মিত সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হামলা এবং ভাঙচুরের আলোচিত ঘটনায় তিন শতাধিক লোকজনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করা হয়েছে। দুদিন বিলম্বে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে মুলাদী থানায় মামলাটি করেন সেতুর নির্মাণশ্রমিক মেহেদী হাসান মৃধা। 

তবে বিস্ময়কর বিষয় হলো- গত ৬ ডিসেম্বর সকালে বরিশাল জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ওসির সামনে এই বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটলেও মামলায় অভিযুক্ত কারও নাম উল্লেখ করতে পারেননি বাদী।

এর আগে গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের উপস্থিতিতে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সেতু উদ্বোধনের কথা ছিল উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার। ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরিশালের ডিসি মো. খায়রুল আলম সুমন, ইউএনও মো. গোলাম সরওয়ার এবং মুলাদী থানার তৎকালীন ওসি মো. সফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। 

মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা আসার আগেই সকাল ১০টার দিকে নাজিরপুর ও রামারপোল গ্রামের তিন শতাধিক লোক সেতুর পূর্বপাড় থেকে মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানে হামলা চালায়।

হামলাকারীরা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ভেঙে ফেলেন এবং উপস্থিত কর্মকর্তাদের সামনেই সভামঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করে লালগালিচা নিয়ে যান। এতে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। জেলার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্মুখে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ উদ্বোধনী আয়োজনে হামলা–ভাঙচুরের এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয় এবং এটি সংবাদপত্রগুলোতে শিরোনাম হয়।

আলোচিত এই ঘটনাকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশের দায়িত্ব পালনে দুর্বলতার চিত্র ফুটে ওঠে। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনে মুলাদী থানার ওসি আরাফাত জাহান চৌধুরী বলেন, দুই গ্রামবাসীর অতর্কিত হামলা প্রতিরোধ করতে গেলে প্রাণহানির ঝুঁকি ছিল। 

তা ছাড়া জেলা প্রশাসক বা ইউএনও কারও তরফ থেকে পুলিশকে অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশনা ছিল না। বরং সংঘাত এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছিল। পুলিশ তাই করেছে। এখন ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আসামিরা গ্রেপ্তার হবেন। তবে দুদিন তদন্তের পরেও কেন অভিযুক্তকে শনাক্ত করা গেল না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাদী কাউকে চিহ্নিত করে নাম দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। পরবর্তীতে পুলিশের তদন্তে অভিযুক্তদের নাম–পরিচয় পাওয়া যাবে।

সূত্রে জানা গেছে, মুলাদীর আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ৬১৯ মিটার দীর্ঘ ব্রিজটি প্রথমে ‘সৌহার্দ্য সেতু’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এর নাম পরিবর্তন করে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ রাখা হয়। 

তা ছাড়া এই সেতু নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা রেখে প্রশংসিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক মজনুকেও ৬ ডিসেম্বরের উদ্বোধনী আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এসব ঘটনায় সংক্ষুব্ধ পার্শ্ববর্তী দুটি গ্রামের মানুষ বরিশাল জেলা প্রশাসক, ইউএনও এবং পুলিশের ওসির সম্মুখে ক্ষোভ উগরে দেন। একযোগে হামলা চালিয়ে উদ্বোধনী মঞ্চ ভাঙচুর করেন এবং সেতুর নামফলক গুড়িয়ে দেন।

বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঘটনাটিতে মামলা হয়েছে, আসামিরাও গ্রেপ্তার হবে। মাঠপুলিশকে সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে সেদিনের ঘটনায় পুলিশের কর্তব্যে অবহেলা ছিল কি না, তাও তদন্ত করা হচ্ছে।’