ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫

বিছানায় দুই সন্তানের গলাকাটা মরদেহ, পাশেই ঝুলছিলেন মা

বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ০২:১৪ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। একটি বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মায়ের মরদেহ এবং একই ঘরের বিছানা থেকে দুই শিশুর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মাঝিড়া এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা স্থানীয়দের মনে শোকের ছায়া নেমেছে।

শাজাহানপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম শফিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সকালে মা ও দুই শিশুকে ঘুম থেকে উঠতে না দেখে এবং ঘরের দরজা বন্ধ পেয়ে প্রথমে স্বজনরা বিষয়টি সন্দেহ করেন। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়া না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেন। তখনই তারা দেখতে পান—ঘরের একটি আড়ার সঙ্গে ঝুলছে গৃহবধূর নিথর দেহ, আর বিছানায় পড়ে আছে তার দুই সন্তানের গলাকাটা মরদেহ।

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরটি ঘিরে ফেলে এবং প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। ওসি শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, ‘আমরা ঘটনাস্থলে দুটি শিশুর গলাকাটা লাশ এবং তাদের মায়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছি। ঘটনাটি দুঃখজনক। এটা আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড—তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমরা ঘটনার সব দিক গভীরভাবে তদন্ত করছি।’

স্থানীয়রা বলছেন, পরিবারটি শান্ত ও স্বাভাবিকভাবেই বসবাস করত। তবে কেন এমন ঘটনা ঘটতে পারে—তা নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন আলোচনা চলছে। কেউ কেউ পারিবারিক কলহ বা মানসিক অবসাদের সম্ভাবনার কথা বললেও পুলিশ তদন্তের আগে এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ।

মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যার প্রকৃতি, ব্যবহৃত অস্ত্র এবং ঘটনার সময় নির্ধারণে ফরেনসিক রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের একটি বিশেষ তদন্ত টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। ঘরে কোনো লুটপাট বা বাইরের অনুপ্রবেশের চিহ্ন আছে কি না, সেদিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। স্বজনরা একসঙ্গে তিন মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা বলছেন, এমন বেদনাদায়ক ঘটনা শাজাহানপুরে আগে কখনো দেখেননি।

ওসি শফিকুল ইসলাম শফিক আরও বলেন, ‘এটি হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা—এখনই নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। প্রমাণ ও তদন্তের ভিত্তিতে আমরা খুব দ্রুতই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে আইনি ব্যবস্থা নেব। ময়নাতদন্ত এবং তদন্তের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করেই সামনে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে বলে জানাচ্ছে প্রশাসন।’

ঘটনাটিকে ঘিরে এলাকাজুড়ে নানামুখী প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। পুলিশ সব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছে।