ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

অবৈধ অস্ত্রের মহড়া, কোটি টাকার বালু উত্তোলনে ভাঙনের মুখে গ্রাম

নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৬:৩৮ পিএম
বালুবোঝাই বুলড্রেজারে অস্ত্রের মহড়া। ছবি- সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের মেঘনা নদী এখন অবৈধ অস্ত্রের মহড়া ও বালু সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। নদীর তীরবর্তী চরলাপাং, মানিকনগর, সাহেবনগরসহ অসংখ্য গ্রাম রাতদিন শতাধিক খননযন্ত্রের গর্জনে কেঁপে উঠছে। ফসলি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা ও শত শত ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়। অথচ প্রশাসন দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চুপ দর্শকের ভূমিকায়।

গত ১০ আগস্ট বিকেলের এক মর্মান্তিক ঘটনা এলাকাবাসীর আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই দিন সোনারগাঁও থেকে সলিমগঞ্জের গণিশাহ মাজারের উরসে যোগ দিতে যাওয়া একটি ট্রলার ধড়াভাঙ্গা এলাকায় পৌঁছালে বালুবোঝাই বুলড্রেজারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। মুহূর্তেই ট্রলারটি ডুবে যায়, প্রাণ হারান আশরাফ উদ্দিন (৪৪)।

সরকারি নথি অনুযায়ী, নাসিরাবাদ বালুমহাল ১৪৩২ বঙ্গাব্দ মেয়াদে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ৮ কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছে সাহেবনগরের শাখাওয়াত হোসেনের প্রতিষ্ঠান মেসার্স সামিউল ট্রেডার্স। কিন্তু ইজারার নিয়ম মানা হচ্ছে না। বরং রাতদিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এই ব্যবসায় জড়িত রয়েছে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শতাধিক প্রভাবশালী নেতাকর্মী।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ‘স্বর্ণমহল’ খ্যাত এই বালুমহলকে ঘিরে চলছে সশস্ত্র পাহারা। কেউ প্রতিবাদ করলে পড়তে হয় জীবনহুমকির মুখে।

সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা মেহেদি হাসান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এখনই ঐক্যবদ্ধ না হলে চরলাপাং, মানিকনগরসহ আশপাশের গ্রামগুলো মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইজারাদার শাখাওয়াত হোসেন দাবি করেন, ‘আমরা সরকারি নিয়ম মেনেই কাজ করছি। অস্ত্র মহড়া বা রাতে বালু উত্তোলনের অভিযোগ সঠিক নয়। প্রশাসনকেও বলেছি, রাতে কোনো ড্রেজার চললে জব্দ করতে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী জানান, তার কাছে বালুমহলে অবৈধ কর্মকাণ্ডের একাধিক অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে বালুমহলে অভিযান পরিচালনা জটিল, কারণ সেখানে মাঝে মাঝে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তবে শিগগিরই যৌথ বাহিনী নিয়ে অভিযান চালানো হবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান, ‘সকল প্রকার নিয়মনীতি মেনেই বালুমহলের ইজারা দেওয়া হয়েছে। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’