শাপলা হলো আমাদের জাতীয় ফুল। এই ফুলটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি রয়েছে পুষ্টিগুন সম্পূর্ণ। শাপলা কাঁচাও খাওয়া যায় আবার সবজি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এর তরকারি খুবই সুস্বাদু ও রয়েছে ভেষজ গুণাবলি। শাপলা ফুল দাম কম হওয়ায় নিন্মবিত্তদের এর চাহিদা রয়েছে বেশ।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় শাপলা বিক্রি বেশ জমে উঠেছে। গ্রামের লোকজনরা খাল, বিল, জলাশয় থেকে শাপলা কুড়িয়ে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে অনেকেই বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিন্মাঞ্চলে প্রায় ৪-৫ মাস পানি থাকে। এতে খাল বিল জলাশয় ও নিচু এলাকার কৃষি জমির মধ্যে পানি থাকায় প্রাকৃতিকভাবে শাপলা ফুল ফুটছে। এলাকার খেটে খাওয়া অনেক লোকজন শাপলা কুড়িয়ে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে তারা হাটে বাজারে গ্রামে গঞ্জে বিক্রি করছেন।
এদিকে পৌর শহরের দেবগ্রাম, উপজেলার বনগজ,ভবানিপুর, বৈষ্ণবপুর, টেংরাপাড়া, ধরখার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, খাল, বিল, জলাশয় ও কৃষি জমির মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে শাপলা ফুল ফুটেছে। শাপলার মনোরম দৃশ্য দেখে অনেকেই মৃগ্ধ। সকালে নানা বয়সি খেটে খাওয়া লোকজন শাপলা কুড়িয়ে এনে হাট বাজার পাড়া মহল্লায় বিক্রি করছেন।
পৌর শহরের সড়ক বাজারে শাপলা ফুল বিক্রেতা মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। যখন যে কাজ পাই সে কাজ করি। গত ১ মাসের উপর ধরে খাল, বিল জলাশয় ও নিন্মাঞ্চলের কৃষি জমিতে প্রাকৃতিকভাবে ফুটা শাপলা ফুল কুড়িয়ে বাজারে বিক্রি করছি।
তিনি আরো বলেন, এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পানি বাড়েনি। তাই তুলনামূলক শাপলা কম হয়েছে। তবে প্রতিদিন ভোর বেলা শাপলা কুড়াতে চলে যায়। তারপর এগুলো বাজারে বসে বিক্রি করছি। শাপলার চাহিদা বাজারে ভালো রয়েছে। প্রতি আটি শাপলা ৩০ টাকায় বিক্রি করছি। দৈনিক শাপলা বিক্রি করে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে ভালোই চলছে সংসার।
আবুল হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে এলাকায় ৪-৫ মাস পানি থাকে। এবার অতিরিক্ত বৃষ্টি বা কাঙ্খিত বন্যা না হওয়ায় তেমন পানি হয়নি। এরপরও নিন্ম এলাকায় কৃষি জমিতে শাপলা ফুল ফুটেছে। তবে তুলনামুলক রয়েছে অনেক কম। বাজারে শাপলার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তিনি শারীরিক সমস্যার কারণে আমি ভারি কোন কাজ করতে পারছি না।
গত ১ মাস ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে শাপলা কুড়িয়ে বাজারে বিক্রি করছি। অনেক সময় পাড়া মহল্লায় হেটে বিক্রি করছি। নিজে কুড়িয়ে নিজে বিক্রি করায় কোন পুঁজি লাগছে না। দৈনিক নিচে ৫’শ টাকার উপর শাপলা বিক্রি করা হয়। আমার মতো অনেকেই পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকার ক্রেতা মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, এক সময় শাপলা প্রচুর দেখা যেতো। এখন তেমন চোখে পড়ে না। বাজারে শাপলা দেখে দুই আঁটি ৬০ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে।
গৃহিণী লিমা আক্তার বলেন, শাপলার তরকারি খুবই সুস্বাদু। সব সময় পাওয়া যায় না। বাজারে দেখে ১ আটি ৩০ টাকা দিয়ে কেনা হয়। মনে হয় কিছুটা দাম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-শবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুন অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুন বেশি। ডায়াবেটিস, বুক জ্বালা, লিভার, ইউরিনারী সমস্যার সমাধানসহ নারীদের মাসিক নিয়ন্ত্রনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, আসলে শাপলা সাধারণত আমাদের দেশে সাদা, বেগুনি আর লাল রঙের হয়ে থাকে। এর মধ্যে সাদা ফুলের শাপলা সবজি হিসেবে এবং লাল রঙের শাপলা ওষুধি কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। পুষ্টিমানে শাপলা অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি সবজি। সাধারণ শাক-সবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ বেশি। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি। এটি সবজি হিসেবে খুব ভালো। অনেকেই বাজারে শাপলা বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করছেন।
তিনি বলেন, এক সময় পুকুর খাল বিল ও জলাশয়গুলোতে প্রচুর শাপলা চোখে পড়তো। জলবায়ুর পরিবর্তন, আবাদি জমি ভরাট, জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগসহ নানা কারণে শাপলার বংশ বিস্তার দিন দিন কমে যাচ্ছে।

 
                             
                                    
 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                            -20250905162745-(2)-20250919184044-20250926173705-20251010164039-20251011171436-(1)-20251017163112-(1)-20251031181224.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন