উচ্চ ফলনের আশায় আমন মৌসুমে ‘রাজা ধান’ লাগিয়েছিলেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কৃষকরা। কিন্তু সেই আশাই এখন পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে। বীজ কোম্পানির আশ্বাসে যে ব্র্যাক-১৮ রাজা ধান চাষ করেছিলেন তারা, সেই ধান এখন মাঠে শুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে খড়ের মতো। চোখের সামনে পরিশ্রমের ফল ধ্বংস হতে দেখে হতাশ, দিশেহারা ও ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা।
আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের আবাদপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম এই রাজা ধান চাষ করে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল, এই ধান বিক্রি করে ছেলের লেখাপড়ার খরচ আর মা-বাবার চিকিৎসা করব। দোকানদার বলেছিল, এই ধান নাকি খুব ভালো ফলন দেবে, গাছও হবে শক্ত। ধান লাগানোর পর গাছ সতেজ ও শীষভরা ছিল। বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ২৭ মন হওয়ার কথা থাকলেও এখন পুরো জমির ৮০ শতাংশ জায়গায় শুধু শুকনো ধানের গাছ। সব শেষ হয়ে গেছে।’
রফিকুলের মতো একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন রামশালা, কাঁঠালবাড়ী, ভিকনী ও পশ্চিম আমুট্ট সংলগ্ন খাদাইল মাঠের অনেক কৃষক। তারা সবাই ‘রাজা ধান’ নামের একই জাতের বীজ ব্যবহার করেছিলেন। শুরুতে চারা গাছ ছিল সতেজ, পুষ্ট ও শীষভরা।
কৃষকরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন—এই আমন মৌসুমে হয়তো কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন। কিন্তু সময় গড়াতেই সেই সবুজ মাঠে নামে অন্ধকারের ছায়া। প্রথমে কিছু গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়, এরপর গোড়া থেকে শুকিয়ে যেতে থাকে। কয়েক দিনের মধ্যেই বেশিরভাগ জমির ধানগাছ মরে যায়।
কৃষক রফিকুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে আরও বলেন, ‘কলেজ বাজার থেকে উচ্চ ফলনের আশায় মজিবর বীজ ভান্ডার থেকে কিনেছিলাম ব্র্যাক-১৮ আমন মৌসুমের রাজা ধান বীজ। ধান লাগানোর পর গাছ সতেজ ও শীষভরা ছিল। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই গাছ শুকিয়ে মরে যেতে শুরু করে। দোকানদারের পরামর্শে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন মাঠে কোনো গাছ বাঁচেনি, উল্টো সব মরে গেছে।’
কৃষক মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ২৭ মন ধানের আশায় রাজা বাবু বীজ কিনেছিলাম। ধান লাগানোর পর এমিস্টার টপ, এনসিপিওসহ বিভিন্ন কীটনাশক দিয়েছি। দেড় বিঘা জমিতে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন ধানের গাছ পুড়ে যাওয়ার মতো শুকিয়ে গেছে, আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। জমিতে এমন অবস্থা যে ব্যাঙও যাবে না। রাজা ধান লাগিয়ে আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি। ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেছি।’
-20251031112221.jpg) 
তিনি জানান, শুধু আমি নই, ভিকনী গ্রামের কৃষক মতিন মিয়াও ৭ বিঘা জমিতে একই ধান লাগিয়ে একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন। ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে আজ তিনি নিঃস্ব ও ঋণে জর্জরিত।
মজিবর বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. মজিবর রহমান (মজু) বলেন, ‘আমি অভিযোগটি পেয়েছি এবং বিষয়টি ব্র্যাক অফিসে জানিয়েছি।’
ব্র্যাক জয়পুরহাটের সিনিয়র টেরিটরি অফিসার আসাদুজ্জামান খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘রাজা ধান লাগিয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে যদি জানতে পারি এই ধানটির জন্য কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাহলে প্রয়োজনে গবেষণাগার থেকে বিশেষজ্ঞ টিম এনে পরীক্ষা করব। যদি রাজা ধানের বীজে সমস্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবিদা খানম বৈশাখী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ছবিসহ একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ব্র্যাক-১৮ জাতের ধান উপজেলার কৃষকরা লাগিয়েছেন। তাদের বলা হয়েছিল এটি উচ্চফলনশীল জাতের ধান। কিন্তু কৃষকরা অভিযোগ করছেন, ধানের গাছ মরে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কমিটি গঠন করব। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031164732.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন