ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

গান গেয়ে চলত হেলালের সংসার, বাধার মুখে উপার্জন বন্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ০৩:২৫ পিএম
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হেলাল মিয়ার পরিবার। ছবি - সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পৌর মুক্ত মঞ্চে টানা ৪০ বছর ধরে গান পরিবেশন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হেলাল মিয়ার পরিবার। কিন্তু স্থানীয় একটি গোষ্ঠীর বাধার মুখে গত পাঁচ দিন ধরে সেখানে গান গাইতে পারছেন না তারা। এতে চরম সংকটে পড়েছে ১৩ সদস্যের এই অন্ধ পরিবার।

সদর উপজেলার রাজঘর গ্রামের বাসিন্দা হেলাল মিয়া জানান, গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) প্রতিদিনের মতো তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা পৌর মুক্ত মঞ্চে গান পরিবেশন করছিলেন। এ সময় কয়েকজন যুবক এসে তাদের গান গাইতে বাধা দেন।

তারা জানান, ‘অনেক গান হয়েছে, ভবিষ্যতে যে-ই ক্ষমতায় আসুক- এখানে আর গান গাইতে দেওয়া হবে না।’ পাশাপাশি বাউল শিল্পী আবুল সরকারের নাম উল্লেখ করে গান-বাজনা ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালানোর ‘পরামর্শ’ দেন। তবে ওই যুবকদের পরিচয় জানাতে পারেননি হেলাল মিয়া।

ঘটনার পর ভীত হয়ে পরিবারের সবাই নিজের বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে জানান তিনি। গান-বাজনা বন্ধ থাকায় তাদের সংসারের খরচ চালানো এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

১৩ সদস্যের এই পরিবারে নয়জনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। হেলাল মিয়া, তার চার ছেলে ও এক মেয়ে গান করে সংসার চালান। হাত না পেতে সঙ্গীতই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। ৬৫ বছর বয়সী হেলাল মিয়া কিশোর বয়সে ভাটপাড়া গ্রামের শিল্পী শাহনূর শাহ-এর কাছে গান শেখেন। মাত্র ১০–১২ বছর বয়স থেকেই গান গেয়ে বেড়ানো শুরু করেন তিনি। হানিফ সংকেত পরিচালিত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তেও গান পরিবেশন করেছেন।

বর্তমান সংকট প্রসঙ্গে হেলাল মিয়া জানান, সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচিকে বিষয়টি জানালে তিনি তাকে আগের জায়গায় ফিরে গিয়ে গান-বাজনা চালিয়ে যেতে আশ্বস্ত করেছেন। তবে নিরাপত্তার অভাবে তিনি এখনো সেখানে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। আগামীকাল থেকে আবার গান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে সাবেক মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, ‘হেলাল মিয়া আমার কাছে এসেছিলেন। তাকে অভয় দিয়েছি- আগের জায়গায় গান চালিয়ে যেতে। মেয়র থাকা অবস্থায় পৌর মুক্ত মঞ্চের এক পাশে তার জন্য জায়গা নির্ধারণ করেছিলাম। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের ভিত্তিতে তাকে পাঠিয়েছি, তিনি সেগুলোতেও সফলভাবে গান পরিবেশন করেছেন। ভারতীয় দূতাবাসেও গজল পরিবেশন করেছেন তিনি।’

তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি আলেম সমাজের মুরব্বিদেরও অবগত করা হয়েছে।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবাগত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেছেন, ‘ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’