চাঁদপুরে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এই কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। প্রস্তাবটি সম্মেলনের মধ্যমেয়াদি প্রকল্প হিসেবে গৃহীত হয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) আগ্রহ প্রকাশ করে কাজ শুরু করেছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তার প্রস্তাবের ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী (এনডিসি) স্বাক্ষরিত পত্রে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার ঘোষণা আসে।
২০১৭ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও মৎস্য হিমাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। তবে ভূমির মালিকানা বাংলাদেশ রেলওয়ের থাকায় বিএফডিসি কর্তৃক এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
৮ বছর পর বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন একই প্রকল্পকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করে চলতি বছরের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রস্তাব করেন। তিনি ৪০ একর জমিতে তিন তলা বিশিষ্ট আধুনিক ইলিশ মাছ অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের রূপরেখা তৈরি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে গত ৫ মে চিঠি প্রেরণ করেন।
প্রস্তাবিত আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্রে থাকবে আধুনিক বরফকল, নিলামশেড, আড়তঘর, মিনি ডকইয়ার্ড, পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার, পন্টুন, মাছ হিমায়িতকরণ ও প্যাকেজিংয়ের আধুনিক সুবিধা, মৎস্য জাদুঘর, মৎস্যভিত্তিক কর্পোরেট অফিস স্পেস, ব্যাংক ও রেস্তোরার সুবিধা।
এই আধুনিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলার প্রায় এক কোটি মানুষ, বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আসবে। এছাড়াও ইলিশের বাড়ি হিসেবে পরিচিত চাঁদপুরে পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধিতে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
চাঁদপুরের প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইলিশ আহরণ ও বিক্রয়ের সঙ্গে আমি প্রায় ৪০ বছর জড়িত। জেলার ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি দীর্ঘদিন একই নিয়মে চলছে। আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র হলে জেলাসহ উপকূলীয় জেলার সকল মৎস্যজীবীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।’
নাট্য অভিনেতা ও পরিচালক শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারিভাবে আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র তৈরীর উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এটি বাস্তবায়িত হলে শুধু দেশের নয়, বিদেশি পর্যটকরাও আকৃষ্ট হবেন। একই সাথে সংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকজনের আগমন ঘটবে।’
চাঁদপুরের ব্যবসায়ী সালাম আজাদ ও সমাজকর্মী সেলিম পাটওয়ারী বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের সময় জেলাতে বড় কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের পথে নেওয়া কঠিন কাজ। চাঁদপুর ইলিশ ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে পরিচিত হলেও এতদিন পর্যন্ত আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র ছিল না। বর্তমান জেলা প্রশাসকের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘আমি চাই ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে ইলিশ সংরক্ষণ এবং আমদানি-রপ্তানি সুষ্ঠুভাবে হোক। কেউ যেন এখানে এসে ইলিশ নিয়ে প্রতারিত না হয়। দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা যাতে ইলিশের স্বাদ গ্রহণে উপকৃত হন, সেই ব্যবস্থা করতে চাই।’
তিনি আরও জানান, ‘এ বছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আমার প্রস্তাবের ভিত্তিতে ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করছি সরকার সকলকে সাথে নিয়ে এই কার্যক্রম সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করবে।’
এর আগে জেলা প্রশাসক আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে স্থানীয় মৎস্যজীবী নেতা, জেলে সম্প্রদায়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার মতবিনিময় সভা করেছেন। সংশ্লিষ্টরাও ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সম্মতি প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে একটি থ্রিডি ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়েছে।