বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম শাখার সাবেক মুখপাত্র ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা খানম রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে তিনি বলেন, নারীদের ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে। যাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছি, তারাই এখন মেয়েদের নিয়ে নোংরামি করছেন। এগুলো আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
১৬ মিনিটের সেই ফেসবুক লাইভে ফাতেমা বলেন, চট্টগ্রামের কিছুসংখ্যক মানুষের স্বার্থের কাছে আমাদের রাজনীতি বিক্রি হয়ে গেছে। আন্দোলনের সম্মুখসারির অনেকে এখন আর নেই। এই অবস্থার জন্য দায়ী কিছু ভাই-ব্রাদার, যারা কেন্দ্রের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে বারবার স্থানীয় কোরাম গঠন করেছেন। তাদের এই অপতৎপরতার দায় নিতে হবে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমাদের মূল লড়াই ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, কিন্তু এখন লড়তে হচ্ছে নিজেদের দলের মানুষদের সঙ্গেই। আমি চট্টগ্রামে কীভাবে মেয়েদের নিয়ে নোংরামি হয়, কীভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ হয়-তা কাউকে বোঝাতে পারব না। এই অপমান, নিরাপত্তাহীনতা আর সহ্য করা সম্ভব নয়।
লাইভে ফাতেমা আরও বলেন, চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তালাত মাহমুদ রাফি, রাসেল আহমেদ, রিজাউর রহমানসহ অনেকে। আপনাদের সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে প্রতিবাদ করা উচিত ছিল, তা আপনারা করতে পারেননি।
ফেসবুক লাইভের পর শনিবার (২ আগস্ট) বিকেল ৪টা ৫৬ মিনিটে দেওয়া এক পোস্টে ফাতেমা লেখেন, আজ আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাচ্ছি, আমি এই রাজনৈতিক পথ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমার পরে কেউ না কেউ এই পথ চলবে। চট্টগ্রামের নারী রাজনীতিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
তিনি আরও লেখেন, রাজনীতি শুধু আবেগ দিয়ে চলে না। কিন্তু একজন নারী যখন সব বাধা পেরিয়ে রাজনীতির ময়দানে আসে, তখন যদি তার নিজের দলীয় ভাইয়েরাই তাকে হেয় করে, তাহলে সেখানে রাজনীতি করার পরিবেশ থাকে না। এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
একটি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে ফাতেমা বলেন, আমি কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অভিযোগ করছি না, কিন্তু প্রত্যেকটি মেয়েকে নিয়ে নোংরামি করা হয়েছে-এটা আমাদের নিজের মানুষেরাই করেছে। অথচ আমাদের নেতারা কেউ প্রতিবাদ করেননি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম শাখার (বর্তমানে স্থগিত) সাবেক আহ্বায়ক আরিফ মইনুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির কমিটিতে যাঁরা পদ না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন, তাঁরা নানা অজুহাতে পদত্যাগ করছেন। ফাতেমার ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে।
তিনি আরও জানান, একটি ফেসবুক পেজ থেকে চট্টগ্রামের নারী নেত্রীদের নিয়ে কিছু গুজব ছড়ানো হয়েছে। হয়তো তিনি সেগুলোর প্রতিক্রিয়ায় কথা বলেছেন। মাসখানেক আগে ফাতেমাকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিল, পরে সেটি প্রত্যাহার করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত দেশের সব শাখার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ওই দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ।
আপনার মতামত লিখুন :