ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

‘আম্মু কি আর আসবে না’, জ্যোতির দাফনে জমজ সন্তানের কান্না

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০১:৪১ পিএম
টঙ্গীতে ম্যানহোলে পড়ে মারা যাওয়া ফারিয়া তাসনিম জ্যোতির যমজ শিশুসন্তান আরিয়ান ও আইয়ান। ছবি- সংগৃহীত

গাজীপুরের টঙ্গীতে খোলা নালায় পড়ে প্রাণ হারানো ফারিয়া তাসনিম জ্যোতির (৩২) মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দাফনের সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়- জ্যোতির জমজ সন্তানরা মায়ের কবরের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার পুরাতন গোরস্থান জামে মসজিদে জানাজা শেষে পুরাতন কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

নিহত জ্যোতি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাগানপাড়ার মৃত বাবলু মেম্বারের মেয়ে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।

এরআগে গত রোববার রাত সোয়া ৯টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় খোলা ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ হন জ্যোতি।

জানা যায়, জ্যোতি যে ড্রেনে পড়েছিল, ওই ড্রেনের পানি গিয়ে পড়ে শালিকচূড়া বিলে। ঘটনার পর টানা উদ্ধার অভিযানের মাধ্যমে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে শালিকচূড়া (টেকপাড়া) বিল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।

জ্যোতি ঢাকার মিরপুরে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন এবং ‘মনি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল হেলথ’ নামের একটি ওষুধ কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি টঙ্গীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহের কাজে গিয়েছিলেন।

জ্যোতির বড় ভাই মো. আক্তারুজ্জামান শোভন জানান, ‘রোববার রাতে বোনের ফোন বন্ধ পেয়ে আমরা খোঁজাখুঁজি শুরু করি। পরে সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ব্যবহৃত জুতা পাই, তখনই নিশ্চিত হই তিনি নিখোঁজ হয়েছেন।’

আক্তারুজ্জামান শোভন আরও জানান, ‘মঙ্গলবার আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুপুরে মরদেহ চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আসা হয়। রাত ১০টায় জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠিত হয়।’

বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে জানাজায় অংশ নেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। জমজ সন্তান আরিয়ান ও আইয়ানের কান্নায় আবেগে ভেঙে পড়েন অনেকেই।

‘আম্মু কি আর আসবে না?’- শিশুদের এই প্রশ্নে উপস্থিত অনেকের চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

নিহতের বড় ভাইয়ের ছেলে আশিকুজ্জামান নিশাত বলেন, ‘এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। নিষ্পাপ দুই শিশুকে কীভাবে সান্ত্বনা দেব? ঢাকনাবিহীন ড্রেন তাদের জীবন থেকে মাকে কেড়ে নিল।’

জানাজা ও দাফনে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম পিটু, পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, জেলা দোকান মালিক সমিতির সদস্যসচিব সুমন পারভেজ খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা ও স্থানীয় জনগণ অংশ নেন।