ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

আশুলিয়ায় শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, ১৫ কারখানা ছুটি ঘোষণা

সাভার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৫:৫৫ পিএম
নাসা গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

শিল্পাঞ্চল সাভারের আশুলিয়ায় নাসা গ্রুপের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে আশপাশের ১৫টি কারখানাকে ছুটি দেওয়া হয় বলে জানান শিল্প পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় নাসা গ্রুপের কারখানার শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কারখানা সংলগ্ন বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর সড়ক অবরোধ করেন।

বিক্ষোভকারী শ্রমিক, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, জুলাই মাসের বেতন বকেয়া সংক্রান্ত কারণে গত রোববার থেকে নাসা গ্রুপের নরসিংহপুর কারখানার জন্য চার দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ছুটি শেষে বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যোগ দিতে কারখানার সামনে আসেন শ্রমিকরা। সেখানে তারা আগামী সোমবার পর্যন্ত পুনরায় কারখানা ছুটির নোটিশ দেখেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সড়ক অবরোধ করেন।

শ্রমিকদের একটি অংশ আশপাশের কারখানার সামনে গিয়ে অন্যান্য শ্রমিকদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এদিকে, বিক্ষোভের সময় নাসা গ্রুপের পার্শ্ববর্তী অনন্ত গার্মেন্টের মূল ফটকে নিরাপত্তারক্ষীদের টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাসা গ্রুপের এক শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের তো বাঁচতে হবে। যদি বেতন না পাই, কীভাবে চলব? আজ বেতন দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেওয়া হয়নি। উল্টো আবার চার দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বেতন পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকায় সবাই সড়ক অবরোধ করছিল। চাকরি ছাড়লে যে সুবিধাগুলো পাওয়ার কথা, তা দেওয়া হচ্ছে না, বরং হয়রানি ও শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে।’ 

তিনি আরও জানান, ‘অনন্ত গার্মেন্টের সামনে কিছু শ্রমিক যাওয়ায় গার্মেন্টের ভেতরের শ্রমিকরা ইট নিক্ষেপ করলে বাইরের শ্রমিকরাও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখান।’

অনন্ত গার্মেন্টসের এমডি ইনামুল হক খান বলেন, ‘নাসা গ্রুপের শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে আশপাশের কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করেছে। বিক্ষোভের সময় আমাদের কারখানার গেটে নিরাপত্তারক্ষীদের চেয়ার, টেবিল ও কম্পিউটার পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শ্রমিকেরা যখন বের হচ্ছিল তখন দুষ্কৃতিকারীরা ভেতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়।’

নাসা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক নাইমুল ইসলাম নাইম বলেন, ‘এলসি এবং ব্যাংকিং জটিলতা, প্রতিষ্ঠান-অপচয়ের কারণে কারখানায় আর্থিক সংকট চলছে। গত ১০ মাস ধরে নানা পথে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। জুলাই মাসের বেতন ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে দেওয়া সম্ভব হয়নি। কাজ না থাকায় এবং অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে চার দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছিল। আজকে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। ১৮ আগস্ট বেতন প্রদান করা হবে। নাসা বেসিক কমপ্লেক্স, এজে সুপার কমপ্লেক্স ও নাসা সুপার কমপ্লেক্সে মোট ৯টি কারখানা রয়েছে।’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ভাতা পরিশোধসহ যৌক্তিক দাবিগুলো দ্রুত পূরণ করতে হবে। না হলে শিল্পখাতে অস্থীতিশীলতা বাড়বে। আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে শ্রম কমিশনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।’

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, ‘বকেয়া বেতনের দাবিতে নাসা গ্রুপের শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৮টায় সড়ক অবরোধ করেছিলেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টায় তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানো হয়েছে। নিরাপত্তার শঙ্কায় ওই এলাকার আরও ১৫টি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।’