বুধবার, ০৪ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আফরোজা লুনা, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম

ঘাস চাষে দিনমজুর থেকে কোটিপতি গফুর

আফরোজা লুনা, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম

নিজের ঘাসের জমিতে আব্দুল গফুর শেখ । ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

নিজের ঘাসের জমিতে আব্দুল গফুর শেখ । ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

মেধা আর শ্রম দিয়ে দারিদ্র্যকে জয় করেছেন আব্দুল গফুর শেখ। দিনমজুর থেকে হয়েছেন কোটিপতি। নেপিয়ার ঘাস চাষ করে পাল্টে দিয়েছেন নিজের ও একটি জনপদের চিত্র।

তাকে দেখেই গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার কয়েক গ্রামের অনেকেই উদ্যোগী হয়েছেন ঘাস চাষে। তারাও হয়েছেন স্বাবলম্বী।

পলাশবাড়ি উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউপির সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গফুর শেখ। নিজের জমিজমা নেই। ২ ছেলে ১ মেয়ের জনক গফুর অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। একটি ছাপড়া ঘরে বউ-সন্তান নিয়ে টানাটানির সংসার ছিল।

জানা গেছে, পলাশবাড়ির উন্নয়নকর্মী সুরুজ হক লিটনের বেসরকারি সংগঠনের সহযোগিতায় ২০০৭ সালে আব্দুল গফুর শেখ নেপিয়ার ঘাস চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজের পাশাপাশি প্রথমে তিনি ৫ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেন। তার এই জমিতে ঘাসের ফলন ভালো হয়। তারপর জমি থেকে তিনি ঘাস বিক্রি শুরু করেন।

৫ শতক জমির ঘাস বিক্রি করে তার অন্তত ১৫ হাজার টাকা লাভ আসে। এরপর ঘাস চাষে গফুরের আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। ঘাসের চাষ বাড়াতে তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আরও বেশি জমিতে চাষ শুরু করেন। এভাবে ঘাষ বিক্রি করে দিন দিন তার আয় বাড়তে থাকে। 

তার জমিতে উৎপাদিত ঘাস এখন বাজারে যায়। প্রতিবেশিরা কিনতে আসে। ব্যাপারীরা আসে ঘাস কিনতে। প্রতি আঁটি ঘাস তিনি ১০ টাকা দামে বিক্রি করেন। এভাবে তার প্রতিদিন ঘাস বিক্রি থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় হতে থাকে। এরপর থেকে তাকে তার পিছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি। নেপিয়ার চাষ করে দরিদ্রতাকে জয় করেছেন তিনি।

সংসার চালিয়ে লাভের টাকায় এখন তার নিজের ১৭ বিঘা জমি ছাড়াও হয়েছে দেশি-বিদেশি ২০টি গরু। হয়েছে দালান-বাড়ি। সংসারে আয় বাড়তে থাকায় গফুর তার ছেলে মেয়েদের পড়ালেখাও শেখাচ্ছেন। নিজের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে কৃষি উন্নয়নে অবদানের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। 

আব্দুল গফুর শেখ বলেন, ‘আর কোনো অভাব নাই। আমার যে সম্পদ আল্লাহ দিয়েছে, তা কোটি টাকারও বেশি।’

পলাশবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মোকসেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ বলেন, ‘গফুর প্রতিদিন ঘাস বিক্রি করে। তার মাসে আয় হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এখন তিনি আর অন্যের জমিতে মজুর খাটেন না। তার নিজের জমিতে মজুর হিসেবে খাটেন অনেকেই।’

গফুর শেখকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আশপাশের গ্রামের মজিবর রহমান, হাবিজার রহমান, নজির হোসেন, মো. এরশাদ, সিরাজুল ইসলাম ও আহাদ মিয়াসহ অনেকেই এখন ঘাস চাষ করেন। অন্য ফসলের পাশাপাশি তারাও ঘাস চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

ঘাস চাষি নবির হোসেন বলেন, ‘ঘাস বেচিয়া (বিক্রি করে) নগদ ট্যাকা (টাকা) আসে বাহে। সেই ট্যাকা দিয়া (দিয়ে) দিরেন ( দিনের) খরচ, বউ-ছলের (বউ-ছেলে) কাপড়-চোপড় কেনা যায়। চিন্তা করা নাগেনা (লাগে না)।’

রাজনীতিক নুরুজ্জামান প্রধান বলেন, ‘নেপিয়ার ঘাস অনেকের সচ্ছলতা এনে দিয়েছে। আগে ছিলেন ভ্যানচালক, রিকশাচালক- তারাও এখন ঘাস চাষ করে উন্নতির মুখ দেখছেন। অনেক বেকার যুবক স্বাবলম্বী হয়েছেন। ঘাস চাসে উদ্বুদ্ধ হওয়ায় গ্রামের যুকদের মধ্যে থেকে জুয়া, নেশা, চুরি ইত্যাদি কমে গেছে।’

পলাশবাড়ি উপজেলার দিঘলকান্দি, কিশোরগাড়ীসহ বেশকিছু গ্রামে এই নেপিয়ার ঘাসের জমি নজরে আসে। সফল চাষি আব্দুল গফুর শেখ বলেন, ‘আগে ছিলাম অন্যের জমির কামলা। এখন নেপিয়ার ঘাস চাষ ও বিক্রি করে অন্তত ১৬ বিঘা জমি কিনতে পেরেছি। গরু কিনেছি অন্তত ১০টি। গরুর দুধ থেকেও আসে নগদ টাকা। আমি এখন আগের চেয়ে ভালো আছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিমাসে আমার ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ আসে। এখন আমার জমি, গরু, দালান-বাড়ি আছে। আগে আমি অন্যের জমিতে কাজ করতাম। এখন আমার জমিতেই অনেকে কাজ করে।’

পলাশবাড়ি কিশোরগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর বলেন, ‘পলাশবাড়ী উপজেলার সুলতানপুর, বাড়ইপাড়া, কিশোরগাড়ী, প্রজাপাড়া বড়শিমুলতলা, দীঘলকান্দি, কাশিয়াবাড়ীসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৩ শ একর জমিজুড়ে চাষ হয়েছে নেপিয়ার ঘাস। যেদিকেই চোখ যায়, দেখা যায় শুধু সবুজের গালিচা। আর নেপিয়ার ঘাস চাষের মাধ্যমে অনেকেই তাদের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন।’

Link copied!