গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি পোশাক কারখানার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন ২৫ বছর বয়সি শ্রমিক মো. জাকির হোসেন। আত্মঘাতী এই সিদ্ধান্তের পেছনে ছিল কর্মস্থলে চরম অপমান। অসুস্থতার কারণে এক দিন ছুটি নেওয়ার অপরাধে সহকর্মীদের সামনেই তাকে ‘কান ধরে ওঠবস’ করানো হয়।
ঘটনার পরপরই সহকর্মীরা বিচার ও ন্যায্যতার দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে রূপ নেয় আন্দোলন। এতে আহত হয়েছেন শতাধিক শ্রমিক ও কমপক্ষে ১০ পুলিশ সদস্য।
ভবনের ৮ তলা থেকে লাফ দিয়ে মারা যাওয়া মো. জাকির হোসেন (২৫) নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাদেচিরাম গ্রামের মোক্তার উদ্দিনের ছেলে। তিনি শ্রীপুর জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেডের কারখানায় কাজ করতেন।
জাকিরের সহকর্মী রাজিবুল ইসলাম বলেন, গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে আমাদের কারখানার শ্রমিক জাকির হোসেন অসুস্থতার জন্য এক দিনের ছুটি নেয়। এরপর ছুটি শেষে কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে সব শ্রমিকের সামনে কান ধরে ওঠবস করান। এই অপমানে সে কারখানার আটতলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।
রাজিবুল ইসলাম বলেন, এর প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করলে পুলিশ প্রথমে আমাদের ওপর লাঠিপেটা শুরু করে। এরপর আমাদের লক্ষ্য করে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে গুলি চালায়। এতে আমাদের শতাধিক শ্রমিক আহত হয়। সীমানা প্রাচীর টপকে পালিয়ে যাওয়ার সময় অনেক শ্রমিক আহত হয়।
কারখানার শ্রমিক রতন মিয়া বলেন, আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। আমাদের অনেক গর্ভবতী নারী শ্রমিক আহত হয়েছে। অনেককেই বিবস্ত্র করে পিটিয়ে আহত করে পুলিশ-সেনাবাহিনী। আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া শ্রমিকদের খোঁজে খোঁজে লাঠিপেটা করে আহত করে। কত শ্রমিক আহত হয়েছে তার সংখ্যা বলে শেষ করা যাবে না।
নারী শ্রমিক লিপি আক্তার বলেন, পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপের পর অনেক শ্রমিক আহত হয়। আহত শ্রমিকদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। অনেক শ্রমিক আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চালায়। আমাদের অর্ধশতাধিক শ্রমিককে পিটিয়ে আহত করে আটক করে। ওদের নির্যাতনের মাত্রা জংলি জানোয়ারের চেয়ে ভয়াবহ।
কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা জুবায়ের এম বাশার বলেন, একজন শ্রমিক আত্মহত্যা করছে এটাই জানি। এর জেরে তারা কারখানা ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে। খুবই উত্তেজনা চলছে, পরে কথা বলব।
শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, সকাল থেকেই পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তবে কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি। এই মুহূর্তে কতজন শ্রমিক আটক করা হয়েছে তা বলা সম্ভব না। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা শিল্পপুলিশের একটি এপিসি ভাঙচুর করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :