গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তায় হানিট্র্যাপের (প্রতারণার ফাঁদ) ভিডিও ধারণ করাকে কেন্দ্র করে নির্মমভাবে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুর ৩টা পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান। গ্রেফতারকৃত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং ২ জনকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জামলাপুর জেলার মেলানদহ থানার মাহমুদপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান (৩৪), তার স্ত্রী গোলাপী বেগম (২৮) (দু’জনই গাজীপুর জেলা সদরের ভাবনীপুর এলাকার), পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার সোনাহার গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে স্বাধীন (২৮) (গাজীপুর শিববাড়ী এলাকা থেকে), খুলনার সোনাডাঙ্গার ময়লাপোতা গ্রামের হানিফের ছেলে আল-আমিন (২১) (ডিএমপি’র তুরাগ থানা থেকে), শেরপুরের নকলার চিতলিয়া গ্রামের আব্দুল সালামের ছেলে মো. সুমন উরফে সাব্বির (২৬), কুমিল্লার হোমনা থানার কাশিপুর অনন্তরপুরের হানিফ ভূইয়া ছেলে মো. শাহজালাল (৩২) (ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে), কিশোরগঞ্জ থেকে মো. শহিদুল।
পুলিশ কমিশনার জানান, তুহিনকে হত্যা করার আগে ‘পারুল আক্তার ওরফে গোলাপী’ নামের এক নারীর মাধ্যমে হানিট্র্যাপের ফাঁদ পেতেছিল সন্ত্রাসীরা।
পুলিশের তথ্যমতে, বাদশা নামে এক ব্যক্তি একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলছিলেন, তখন পারুল আক্তার তাকে বিভিন্নভাবে কথা বলার চেষ্টা করেন। বাদশা তাকে ধাক্কা দিলে গোলাপীর সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপ দেয়। আহত বাদশা দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাকে ধাওয়া দেয়। এ সময় ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। সন্ত্রাসীদের চাপ সত্ত্বেও তিনি ভিডিও ডিলিট করতে অস্বীকার করলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সন্ত্রাসীরা। তুহিন দৌঁড়ে একটি মুদি দোকানে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করলেও সেখানে তাকে পেয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় মামলা রয়েছে, যার মধ্যে কেটু মিজানের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে।
পুলিশ কমিশনার স্বীকার করেন, সাংবাদিক হত্যার দায় তারা এড়িয়ে যেতে পারবে না। জনবল স্বল্পতা ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে কিছু ত্রুটি হয়েছে। গাজীপুর মহানগরীতে পুলিশের জনবল প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে, যা অপরাধ দমনে অসুবিধার কারণ। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধ উদ্ঘাটন—এই দুই কাজ করি। কিন্তু অপরাধ প্রতিরোধ সবসময় সম্ভব নয়।’
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে এবং দ্রুততম সময়ে মামলার বিচার সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কমিশনার আরও বলেন, ‘গাজীপুরে ৫ আগস্টের পর অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মসংস্থান কমে গেছে, যা অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এছাড়াও এক প্রভাবশালী দলের দ্বারা এই এলাকায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টাও নজরদারি করা হচ্ছে। এসব পরিস্থিতিতে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জিএমপি কাজ করছে।’