ঢাকা শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫

আজ আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৫, ১১:১৩ এএম
ছবি- সংগৃহীত

আজ ১১ অক্টোবর, আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও যথাযোগ্য উদ্দীপনার সাথে পালিত হচ্ছে দিবসটি। 

কন্যারা যদি না থাকত, পৃথিবী শূন্য হয়ে যেত। সভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে যেমন পুরুষের অবদান রয়েছে, তেমনি রয়েছে নারীর পরিশ্রম, মমতা ও ত্যাগ। মা, বোন, স্ত্রী- এই পরিচয়ের বাইরে নারীরা মানবতার প্রতীক; তারা ধৈর্য, সাহস, সংগ্রাম আর সৃষ্টিশীলতার অন্য নাম।

অথচ আমাদের সমাজব্যবস্থা এখনো তাদের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই নারী-পুরুষের বৈষম্য যেন সমাজের অদৃশ্য শিকল। পুরুষদের মতো নারীরও বেঁচে থাকার; বিশেষ করে নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বাস্তব চত্র এখনো নারীদের কাজকে সীমাবদ্ধ রাখা হয় রান্নাঘর ও সংসার পর্যন্ত।

শিক্ষা কেবল চাকরির জন্য নয়। মানুষ হয়ে ওঠার, চিন্তা করার, সমাজকে আলোকিত করার জন্যও অপরিহার্য। অথচ এক শ্রেণির মানুষ ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের শিক্ষার আলো থেকে দূরে রাখতে চায়। কোনো ধর্মেই নারীকে অশিক্ষিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়নি, বরং প্রতিটি ধর্মেই জ্ঞানের গুরুত্ব সমানভাবে প্রাধান্য পেয়েছে।

নারীর জীবনের প্রতিটি ধাপেই প্রতিবন্ধকতার গল্প লুকিয়ে আছে। শত বাধা পেরিয়ে কেউ যখন কর্মক্ষেত্রে সফল হয়, তখনও বৈষম্যের ছায়া তাকে তাড়া করে ফেরে। আজও নারীদের মানসিকভাবে দুর্বল মনে করা হয়, ফলে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তারা প্রাপ্য মর্যাদা পান না।

যৌতুক, এসিড সন্ত্রাস, ধর্ষণ এখনো আমাদের সমাজের কলঙ্ক। কিছু অপরাধীর বিচার হলেও বেশির ভাগই রয়ে যায় আইনের ফাঁক-ফোকরে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মর্যাদা, ভালোবাসা, সব ক্ষেত্রেই বঞ্চিত কন্যাশিশুরা। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বহু দেশেই প্রতিনিয়ত তারা অবহেলার শিকার।

মানবকল্যাণে নারী-পুরুষ উভয়ের অবদান অনস্বীকার্য। তাই সব শিশুর মতো কন্যাশিশুরও সমানভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার আছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, আমাদের সমাজে তাদের জন্য বাইরের পৃথিবী কতটা নিরাপদ? প্রতিদিন খবরের কাগজে প্রকাশিত হয় নির্যাতন, নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র। পরিবার ও সমাজ, দুই স্তরেই তাদের ওপর চলে নিপীড়নের নানা রূপ।

এই বাস্তবতা বদলাতে ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথম পালিত হয় আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিবছর দিনটি পালন করে আসছে যথাযোগ্য মর্যাদায়। কন্যাশিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, আইনি সহায়তা, ন্যায়ের অধিকার ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিই এ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।

২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর কানাডার প্রস্তাবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে দিনটি পালন করা হয়।

আজ সময় এসেছে কন্যাশিশুদের প্রাপ্য মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার। তারা সমাজের বোঝা নয়, বরং শক্তি ও সম্ভাবনার প্রতীক। কন্যাশিশুরা শিক্ষিত হলে তারা আত্মনির্ভর হবে, বদলে দেবে সমাজ ও জাতির ভবিষ্যৎ।