গাজীপুরের শ্রীপুরে আঞ্চলিক সড়কের সেরার খালের ওপর নির্মিত সেতুটির কাজ ছয় মাস আগে শেষ হয়েছে। অথচ সেতুটির দুই প্রান্তে এখনো সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি। ফলে কোটি টাকার এই সেতুটি আজও অচল পড়ে আছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের চাওবন-ডুয়াইবাড়ি আঞ্চলিক সড়কের সেরার খালের ওপর সেতুটি নির্মাণের সময় দ্রুত সংযোগ সড়ক তৈরির আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসী কাঠ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করে সেতুতে ওঠানামা করছেন। এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন শিক্ষার্থী, নারী ও বয়োবৃদ্ধরা।
চাওবন গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, ‘এই সেতুটি আমাদের কয়েকটি গ্রামের প্রধান চলাচলের পথ। কিন্তু সেতুর সঙ্গে রাস্তা না থাকায় প্রতিদিন কাঠ-বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে হয়। শিশুরা আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকে।’
স্থানীয় রওশন বেগম বলেন, ‘আগে সেতু না থাকায় খাল পার হতে কষ্ট হতো। এখন সেতু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রাস্তা না থাকায় আগের মতোই দুর্ভোগ চলছে।’ তিনি জানান, দুই সপ্তাহ আগে এক স্কুলশিক্ষার্থী সাঁকো থেকে পড়ে রডে গেঁথে গুরুতর আহত হয়।
কারিমা নামে আরেক নারী বলেন, ‘সেতুর ওপর সাঁকো দিয়ে উঠতে কখনো দেখিনি। প্রতিদিন আমার বাচ্চাকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে চলাচল করতে হয়। আমরা দ্রুত রাস্তা নির্মাণ চাই।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটির কোনো ব্যবহারই হচ্ছে না। অথচ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সরকারি বরাদ্দের বড় অঙ্কের অর্থ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ‘গ্রামীণ সড়কে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত সেতুটি তৈরি করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিথুন এন্টারপ্রাইজ।
মিথুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুর মূল কাজ শেষ। তবে বর্ষা থাকার কারণে মাটি আনা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা হয়েছে—এক সপ্তাহের মধ্যে সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা যাবে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, ‘মাটির ব্যবস্থা হলেই দ্রুত রাস্তার কাজ শুরু করা হবে।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইশতিয়াক হোসাইন উজ্জ্বল বলেন, ‘আমি যোগদানের আগেই কাজ শুরু হয়েছিল। সেতুর মূল অংশ প্রস্তুত। দুই পাশের প্রপোজ বা সংযোগ অংশের কাজ বাকি আছে। আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, ‘সেতুটির সংযোগ সড়ক নিয়ে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ দূরীকরণ আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সংযোগ সড়ক নির্মাণে মাটির কাজ থাকায় বিগত বর্ষা মৌসুমে অতিবর্ষণের কারণে সংযোগ সড়কের কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে আবশ্যিকভাবে এই কাজ সম্পন্ন হবে। আগামীকাল শনিবার হতেই সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চালু হবে।’

