গাজীপুরের কালীগঞ্জে কৃষক মনির মোল্লা (৫৫) হত্যা মামলার জটিল রহস্য মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই উদঘাটন করেছে পুলিশ।
শুরুতে কোনো সূত্র না থাকায় মামলাটি ‘ক্লুলেস ’ হিসেবে দেখা দিলেও প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারির সহায়তায় তদন্তকারীরা হত্যাকাণ্ডের পেছনে লুকিয়ে থাকা বহুদিনের ব্যক্তিগত বিরোধ ও নারী-সংক্রান্ত টানাপোড়েনের সন্ধান পান।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় উলুখোলা পাড়াবর্তা এলাকার কৃষক মনির মোল্লা বাড়ির পাশের সেলিম মিয়ার চায়ের দোকানে যাওয়ার জন্য বের হন। একই দিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে তার স্ত্রী জোসনা বেগমসহ স্বজনেরা খবর পান, কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নের পূর্বাচল সিটির ২৪ নম্বর সেক্টরের ফরেস্ট বিট অফিসের পাশের মাঠে তার লাশ পড়ে আছে।
মনির মোল্লার দুই পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিক কোপ দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সংবাদ পেয়ে উলুখোলা পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা মাঠে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সেদিন রাতেই ছায়া তদন্ত শুরু করে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, ভিকটিম মনির মোল্লা এবং গ্রেপ্তার হওয়া বেদন মৃধা ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন। কিন্তু নারী-কেন্দ্রিক সমস্যা, ভুল বোঝাবুঝি ও দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে দুজনের মধ্যে তীব্র বিরোধ তৈরি হয়। সেই বিরোধই শেষ পর্যন্ত খুনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ওজজ্ঞাসাবাদে বেদন মৃধা এসব তথ্য স্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি।
মনির মোল্লার স্ত্রী অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মো. জামাল উদ্দিনের সমন্বয়ে একটি চৌকস ডিবি টিম মাঠে নামে।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, স্থানীয় সূত্রের তথ্য ও গোয়েন্দা তৎপরতায় দ্রুতই হত্যাকাণ্ডের দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।
৮ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে জয়দেবপুরের পাড়াবর্তা (টেকপাড়া) এলাকার নিজ বাড়ি থেকে বেদন মৃধাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে সোপর্দ করলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
একাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন নাকি আরও কেউ এতে অংশ নিয়েছিল-তা খতিয়ে দেখতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও কালীগঞ্জ থানা পুলিশের যৌথ তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আবু খায়ের, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খন্দকার আশফাকুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মো. আমিনুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন