ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫

পদত্যাগ করলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রাশেদ

যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান। ছবি- সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ২টায় নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। যার স্কিনশর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

রাশেদ খান ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার আহ্বায়ক পদ থেকে আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিচ্ছি। একই সঙ্গে এনসিপি ও এর ছাত্র কিংবা যুব উইংয়ের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই ৷’ 

এই পোস্টের কমেন্ট বক্সে রাশেদ খান লিখেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি ৷ আমি সবসময় আমার শ্রম, মেধা, অর্থ, ধৈর্য ও সময় ব্যয় করে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। কতটা পেরেছি সেটা মূল্যায়ন করার দায়িত্ব আপনাদের। কিন্তু আমি আমার নিজেকে যদি মূল্যায়ন করি, সেক্ষেত্রে বলব, আরও ভালোকিছু হওয়া উচিত ছিল।

আমি একজন আর্টিস্ট, ব্যক্তিগতভাবে আমি দীর্ঘদিন যাবৎ পেশাগত কোনো কর্মে যুক্ত না থাকায় অর্থকষ্টে আছি৷ আমার বিরুদ্ধে যেসব অর্থবিষয়ক/ব্যাংক ব্যালেন্সবিষয়ক মুখরোচক গল্প উৎপাদন করা হয়, তা নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ! কারণ আমার বাস্তবতা আমি নিজে ফেস করি ৷ তবু যদি কারো সন্দেহ থেকে থাকে, তাহলে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ রইল৷ আমি এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি ৷

এতটুকু বলতে পারি, জুলাই বিক্রি করিনি আমি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিখিত কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ না থাকলেও আমার নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে, সেটা হয়তো অনেকের সাথে মিলবে না। এই প্লাটফর্মে থেকে আমার সহযোদ্ধাদের সাথে অসংখ্য ভালো কাজ করার সুযোগ হয়েছে, তার জন্য আমি গর্বিত। আমার শ্রেণির লড়াই, ন্যায্যতার  লড়াই জারি থাকবে ৷

দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো নির্দেশনা না থাকায়, সংগঠন সারা দেশেই স্তিমিত হয়ে গেছে। স্ব স্ব ইউনিট থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। একইসাথে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এনসিপি, যুবশক্তি, বাগছাস ইত্যাদি রাজনৈতিক প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছে ৷

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি কমন প্লাটফর্ম হলেও এর নবগঠিত কমিটি এনসিপি দ্বারা প্রভাবিত একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে ! তবু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সবসময় শুভকামনা থাকবে। গণমানুষের কল্যাণে তাদের নিবেদনকে আমি সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখব।

এদিকে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিজয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে যখন সারা দেশে মোমবাতি প্রজ্বলন হচ্ছে, তখনি রাশেদ খানের পদত্যাগের ফেসবুক স্ট্যাটাস অনেককে হতবাক করেছেন। পোস্টের স্কিনশর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনাও করছেন।

রাশেদের পদত্যাগ পোস্টে প্রেসক্লাব যশোরের সম্পাদক তৌহিদুর রহমান কমেন্টে লিখেছেন ‘বিপ্লবী তরুণ নেতা-সংগঠকের জন্যে সবসময় শুভকামনা, ভালো কিছু প্রত্যাশা। কিন্তু হটাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন!

পদত্যাগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য রাশেদ খানের মুঠোফোনে কল করা হলেও রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, গত ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর রাশেদ খানকে আহ্বায়ক ও জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তিকে সদস্য সচিব করে ১০১ সদস্যের যশোর জেলা কমিটির অনুমোদন দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় পরিষদ।