ঢাকা শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নাদিমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

যশোর  প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ০৯:৫৩ পিএম
সহিদুল হক নাদিম। ছবি- সংগৃহীত

যশোর সদরের কাজি সহিদুল হক নাদিমের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি ও প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, তার নানাবিধ অত্যাচারে পথে বসেছে একাধিক পরিবার। সম্প্রতি যশোর বঙ্গবাজারের দুটি দোকান বিক্রির পরও সেগুলো লুট ও দখলের অভিযোগ উঠেছে নাদিমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশের এসআই আনিসের সহযোগিতার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী মো. সোহেল রানা, যশোর শহরের পুরাতন ডিসি বাংলো রোডের বাসিন্দা। 

তিনি জানান, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদারের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত কাজি সহিদুল হক নাদিম ওরফে ‘টহল নাদিম’ দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। ২৪ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে আবারও অপরাধচক্র সক্রিয় করেছেন তিনি। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে যশোর জেলার কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী এবং এস আই আনিসুর বিভিন্ন সময় তাকে সাহায্য করছে। যার ফলে দিন যত যাচ্ছে নাদিম ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। 

সোহেলের অভিযোগ, ‘টহল নাদিম যশোর বঙ্গবাজারে ১২ ও ১৩ নম্বর দুটি দোকানের পজিশন ৭০ লাখ টাকায় আমাকে বিক্রি করেন। সেখানে আমি ‘চৌধুরি ফার্মেসী এন্ড সার্জিক্যাল’ নামে ঔষধের ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু ব্যবসা শুরুর তিন মাসের মাথায় নাদিম আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় তার নেতৃত্বে ৮–১০ জন সন্ত্রাসী দোকানে হামলা চালায়। তারা হত্যার হুমকিও দেয়।’

সোহেল আরও অভিযোগ করেন, ‘হামলার সময় নাদিমের বাহিনী প্রায় ৫০ লাখ টাকার ঔষধ ও নগদ  ৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। দোকানের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও নষ্ট করা হয়। যে ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত রয়েছে।’ 

এ ঘটনায় সহিদুল হক নাদিম, রাজু হোসেন ও আহাদ আলীকে আসামি করে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনিসুর রহমান সঠিক তদন্তের শর্তে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন বলে অভিযোগ সোহেলের। 

তার কথায়, ‘বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সময়ে বিকাশের মাধ্যমে আনিসুরকে দুই বার টাকা পাঠাই। এর স্ক্রিনশট আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।’

সোহেলের অভিযোগ, দুই লক্ষ টাকা না পেয়ে এসআই আনিসুর তার প্রতি ক্ষিপ্ত হন। পরে নাদিমের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে তদন্ত রিপোর্টে ভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন। এমনকি ৫০ লাখ টাকার ঔষধ উদ্ধার হলেও রিপোর্টে মাত্র ৫০ হাজার টাকার উল্লেখ করা হয়।

লাগাতার হুমকির মুখে ভুক্তভোগী বর্তমানে টহল নাদিম এসআই আনিসুর রহমানের প্রত্যক্ষ আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে সোহেল রানাকে নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে সহিদুল হক নাদিম বলেন, যশোর বঙ্গবাজারে ১২ ও ১৩ নম্বর দোকান ৭০ লাখ টাকায় বিক্রির যে বিষয়ে বলা হয়েছে সেটি সত্য। তবে সোহেল রানা টাকা পরিশোধ না করায় দোকানটি তালাবদ্ধ করি। দোকান লুটের কোনো ঘটনা হয়নি। ঔষধ দোকান থেকে সরানো হয়েছে, তবে এটি বাজার কমিটিকে দেওয়া হয়েছে। তবে দোকান থেকে মেডিসিন সরানোর যে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে সে বিষয়ে সহিদুল স্বচ্ছ মন্তব্য দেননি।

টাকা পরিশোধ করেছে যার দলিল রয়েছে সোহেল রানার কাছে নিকট এ বিষয়ে  প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘দেখানো দলিলটি আসল নয়।’

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনিসুর রহমান সোহেলের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘মামলার ভিত্তিতে তদন্ত হয়েছে। সরেজমিনে যা তথ্য পাওয়া গেছে, তা রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দুই লাখ টাকার ঘুষ দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। বিকাশে কোন ধরনের লেনদেন হয়নি।’

তিনি আরও জানান, সিসি ভিডিও ফুটেজ আমরাও দেখেছি। দোকান লুটের  ৫০–৬০ হাজার টাকার ঔষধ উদ্ধার করে ইতোমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। আমার কারও সাথে কোন যোগসূত্র নেই।