ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারীদের যাতায়াত কমেছে

বেনাপোল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ১১:১৮ পিএম
বেনাপোল চেকপোস্টে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তিতে নানান জটিলতার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত কমেছে ৪ লাখ ২ হাজার ৮৪৯ জন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভারত সরকারের ভ্রমণ সীমিতকরণ এবং একের পর এক শর্ত আরোপে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এতে ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। তবে ভারতীয়দের ভিসা প্রাপ্তিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকায় তাদের যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।

চেকপোস্ট বন্দর সূত্র জানায়, প্রতি বছর ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষার জন্য বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ১৮ থেকে ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এতে যাত্রীরা যেমন সুবিধা পেতেন, তেমনি ভ্রমণ খাতে ভ্রমণকর বাবদ বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা এবং ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় হতো। 

সূত্র আরও জানায়, গেল বছর ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসার মেয়াদ কমানোসহ বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে। এতে ভ্রমণ খাতে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ে। পরবর্তীতে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করেনি ভারত। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী ভিসা না পাওয়ায় নানা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বাংলাদেশিরা।

বেনাপোল স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে বেনাপোল দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৬ লাখ ৫ হাজার ৮১৮ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫২ জন এবং ভারত থেকে ফিরেছেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮৬ জন।

অন্যদিকে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে ভারতে গেছেন মাত্র ২ লাখ ২ হাজার ৯৬৯ জন। এর মধ্যে এক লাখ ১৪ হাজার ৭৩৪ জন বাংলাদেশি ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং ৮৮ হাজার ২৩৫ জন ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন। ফলে দুই অর্থবছরের তুলনায় যাত্রী কমেছে ৪ লাখ ২ হাজার ৮৪৯ জন। এতে ভারত সরকারের ভিসা ফি বাবদ প্রায় ৪২ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ভ্রমণকর বাবদ প্রায় ৩২ কোটি টাকা রাজস্ব কমেছে।

এদিকে ব্যবসা, স্বজনদের সঙ্গে দেখা ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাজে প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়েই প্রায় আড়াই লাখ ভারতীয় পাসপোর্টধারী বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের ভিসা প্রাপ্তিতে কোনো বাধা না থাকায় তাদের যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে। ভারতীয় ভিসা সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশি ভুক্তভোগীরা।

ভারতগামী যাত্রী আতিয়ার রহমান বলেন, ‘কড়াকড়ির কারণে ভিসা পেতে অনেক টাকা ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এতে ব্যবসা ও চিকিৎসায় ক্ষতি হচ্ছে। ভিসা সহজ করার অনুরোধ জানাই।’

ভিসা-সংক্রান্ত ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, ‘আমি ১২ হাজার টাকা দিয়ে ভিসা পেয়েছি। দালাল ছাড়া ভিসা পাওয়া যায় না। এর আগে সব ঠিক থাকা সত্ত্বেও ভিসা না দিয়ে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিয়েছে।’

চিকিৎসা ভিসায় ভারত গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে ফেরা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘কলকাতার একটি হাসপাতালের ডাক্তার দেখানোর জন্য ভিসা নিয়েছিলাম। কিন্তু একজন আত্মীয় অন্য ডাক্তারের কাছে দেখান। এ কারণে ফেরার সময় পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে হয়রানির শিকার হই। প্রায় তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে ভিসা পাব না বলে হুমকিও দেওয়া হয়। অনেকের পাসপোর্টে সিল মারা হয়, এতে পরে ভিসা পাওয়া যায় না। অনেক অনুনয়-বিনয় করে ফিরতে পেরেছি।’

বাংলাদেশ ভ্রমণে আসা ভারতীয় নাগরিক সুরজিৎ সাহা ও রেখা সাহা জানান, কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই ভিসা পেয়েছি। কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা ও ঘোরাফেরার জন্য বাংলাদেশে এসেছি।

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) শামিম হোসেন জানান, ভিসা জটিলতায় যাত্রী পারাপার অনেক কমেছে। এর ফলে সরকারের রাজস্বও কমছে।

সর্বশেষ সোমবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে গেছেন মাত্র ৯৪০ জন, যার মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৫৯০ জন এবং ভারতীয় নাগরিক ৩৫০ জন।