জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে নিজের মেয়েকে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে গৃহবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে এক পিতার বিরুদ্ধে। প্রতিবেশীদের দাবি, এসএসসি পাশ করা ১৯ বছরের লিজাকে যেন কেউ দেখতে বা কথা বলতে না পারে সে জন্য জানালা-দরজা পর্যন্ত টিন ও কাঠ দিয়ে ঘিরে রাখতেন পিতা এনামুল হক।
ঘটনাটি ঘটেছে আক্কেলপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মন্ডলপাড়া এলাকায়। অভিযুক্ত এনামুল (৪৮) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি প্রকল্পে মাস্টার রোলে চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে একটি ডিসপেনসারি পরিচালনা করছেন।
সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে এসে এনামুল দেখতে পান, তার বাড়ির সামনে এলাকাবাসী ভিড় করে আছে। এলাকাবাসীর তোপের মুখে তিনি তালাবদ্ধ বাড়ির দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। বাড়ির অভ্যন্তরে তখন অন্ধকার, শুধু একটি ছোট ফ্যান ও একটি বাতির আলোর ব্যবস্থা। ঘরজুড়ে এলোমেলো অবস্থান আর আসবাবপত্রে লেখা ‘ডা. এনামুল’ যেন এক ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি করেছে।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, প্রথম স্ত্রী জাহানারার আত্মহত্যা এবং বড় মেয়ে লিমার প্রেম করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার পর থেকে এনামুল ছোট মেয়ে লিজাকে ‘নিয়ন্ত্রণে’ রাখতে গৃহবন্দি করে রাখেন। মেধাবী ছাত্রী লিজাকে সমাজবিচ্ছিন্ন করে ঘরবন্দি অবস্থায় নির্যাতন চালানো হয়, এমনকি মেয়েটির মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়।
প্রতিবেশী দীপুর স্ত্রী রিভা আক্তার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার মেয়ে রিয়া ও এনামুলের মেয়ে লিজা একসঙ্গে পড়াশোনা করত। লিজা মেধাবী ছাত্রী ছিল। তার বাবা তাকে গৃহবন্দি করে নির্যাতন করতেন কারও সাথে কথা বলা তো দূরের কথা দেখা করতে দিতেন না।’
আরেক এলাকাবাসী জনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বড় মেয়ে লিমা পালিয়ে বিয়ে করেছেন। এসএসসি পাশের পর ছোট মেয়ে লিজা যেন এমন ঘটনা না ঘটাতে পারে সে জন্য বাড়িতে তালা দিয়ে নির্যাতন ও ঘুমের ওষুধসহ ইনজেকশন দিতেন। এমনকি মেয়ের চুল কেটে ন্যাড়া করেও রেখেছিলেন। মেয়েটি গৃহবন্দি থাকতে থাকতে পাগলের মতো আচরণ করছে। আমরা এলাকাবাসী চাই, মেয়েটির দ্রুত চিকিৎসা করিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন ও আবারও লেখা পড়ায় ফিরিয়ে আসুক।’
অভিযুক্ত পিতা এনামুল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি সকালে নাশতা করে কাজের জন্য বাড়িতে তালা দিয়ে চলে যাই। মেয়েকে পর্দাশীল করে রাখতে এমন করে বাড়িতে রাখি।’ মেয়েকে কোনোদিন নির্যাতন করা বা চেতনানাশক ইনজেকশন দেওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন।
আক্কেলপুর থানার এসআই গনেশ চন্দ্র রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিশেষ সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, এনামুল তার মেয়েকে বিভিন্ন ওষুধ সেবন করে প্রায় পাগল করে রেখেছেন। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, এই বাড়িতে বসবাসের জন্য অনুকুল পরিবেশটুকুও নেই। সামাজিক পরিবেশের অভাব রয়েছে। লিজার বাবাকে বাড়িটিতে বসবাসের সামাজিক পরিবেশ এবং মেয়েকে দ্রুত চিকিৎসার সুব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।’