চাকরির প্রলোভন দেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনায় প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন অভিযুক্ত খাপাজেপ সদস্য ও বিএমইউপির দপ্তর সম্পাদক সাথোয়াই প্রু চৌধুরী।
এ ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় সাংবাদিক মহলসহ ভুক্তভোগীরা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় তারা কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ (খাপাজেপ) সদস্য ও বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক সাথোয়াই প্রু চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় দৈনিক সবুজ বাংলা পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের জেরে গত ২৯ নভেম্বর তিনি একটি মামলা দায়ের করেন।
সে মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধিসহ সাংবাদিক ক্যহ্লা মারমা এবং বাংলাদেশ মারমা ছাত্র ঐক্য পরিষদের সদর উপজেলা শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মংউচিং মারমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলা দায়ের করা হয় জেলার মানিকছড়ি থানায়।
সংবাদটির ভুক্তভোগী প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধি বলেন, ‘শুরু থেকেই প্রতারণা সংক্রান্ত সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য প্রতারক খাপাজেপ সদস্য সাথোয়াই প্রু চৌধুরী আমাকে ১৫ টন খাদ্যশস্য দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তার এমন অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তখনই আমি জানিয়ে দিই, মামলা দিয়ে সাংবাদিকতা থামানো যাবে না। তার অপকর্মের ডকুমেন্টগুলো এখনো আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত প্রতারণা ও দুর্নীতি সম্পর্কিত সংবাদটি প্রকাশ হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপর প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে সাথোয়াই প্রু চৌধুরী সদর ও মানিকছড়ি থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিজের দোষ আড়াল করা এবং সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে গতকাল ৩ ডিসেম্বর বিকেলে খাগড়াছড়ি সদর থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয় তিন জনের বিরুদ্ধে।
এদিকে, দুর্নীতি ও প্রতারণার সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করায় স্থানীয় সাংবাদিক মহল এবং ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সাথোয়াই প্রু চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন।
স্থানীয়রা বলেন, সাধারণ মানুষ কিংবা ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে গঠিত জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দুর্নীতিমুক্ত একটি স্বচ্ছ পরিষদের প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু একজন সদস্য এভাবে প্রতারণা ও দুর্নীতি করবে, তার লাগাম ধরার কেউ নেই? সাংবাদিকরা দুর্নীতি নিয়ে লিখলেই উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা, এ কেমন আচরণ? অবিলম্বে এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি বাতেন মৃধা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
এ প্রসঙ্গে জানতে ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মির্জা সায়েম মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে খাপাজেপ সদস্য ও বিএমইউপি’র দপ্তর সম্পাদক সাথোয়াই প্রু চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘আমি ১৮ নভেম্বর নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি অবগত নই এবং কেউ আমাকে জানায়নি। তবে অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে অনিয়ম প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন