জুলাই হত্যা মামলায় হাসিনা-কাদেরসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে জনসম্মুখে উসকানিমূলক ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাসান মাহমুদসহ আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছেন পুলিশ।

তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করার জন্য মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা ও কর্মীদের নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী, গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মালবাহী ট্রাকের চালক মো. হোসেন গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ঘটনার সময় আরও দুইজন—সাজ্জাদ হোসেন জিহাদ ও শাহিন—আহত হন।

মো. হোসেন (২৫) তখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ঢাকার রাস্তায় কারফিউ থাকা সত্ত্বেও নিজের মালবাহী ট্রাক নিয়ে গাবতলী থেকে বাড়িতে ফেরার পথে চাঁদ উদ্যান এলাকায় আহত হন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য গুলি চালানো নির্দেশ দেন।

নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান

বিস্তারিত পড়ুন

নিহত হোসেনের মা রীনা বেগম ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে মামলার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদপুর থানার এসআই আকরামুজ্জামান গত ২৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা পেনাল কোডের ৩০২/৩৪, ১৪৩, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১০৯, ১২০-খ, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭ ও ১১৪ ধারার অধীনে অপরাধে অভিযুক্ত। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, আসামিরা যৌথভাবে ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার মাধ্যমে দাঙ্গা, হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম এবং জখমের ঘটনাকে সংগঠিত করেছেন।

চূড়ান্ত চার্জশিটে উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন: ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাসান মাহমুদ, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি সাদেক খান, সাবেক কাউন্সিলর আসিফ আহম্মেদ, তারেকুজ্জামান তারেক, সলিম উল্লাহ সেলু। এ ছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানকেও আসামি করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আসামিরা আন্দোলন দমন করার জন্য সরাসরি ও পরোক্ষভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং অন্যান্য সদস্যদের উসকানি দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা কার্যকর করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে মামলায় প্রাথমিকভাবে ৩৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।