ভারি বৃষ্টির কারণে আমাদের বাড়ির মধ্যে হাঁটুর উপরে পানি জমে গেছে। রান্নাঘরের মধ্যেও পানি উঠছে। রান্নাবান্না করতে পারছি না। বাচ্চা নিয়ে সারাদিন ঘরের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। আমাদের বসত ঘরটা উঁচু। সে জন্য বাড়িতে থাকতে পারছি। আজকে দুপুরে রান্না করতে পারিনি। সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে কথাগুলো বলেছিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার নাকসা গ্রামের মো. ইদ্রিস আলীর স্ত্রী আন্জুয়ারা খাতুন।
পাশের এক নারী বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা বারান্দা থেকে নিচে নামতে পারিনি। বাড়িঘর, কবরস্থান সব জায়গায় হাঁটুর ওপর পানি। কাঁচা ঘরের দেয়ালগুলো ভেঙে পড়ছে। পানি বের হওয়ার কোনো পথ নেই। কেউ আমাদের খোঁজও নিচ্ছে না।’
একই গ্রামের বাসিন্দা জিনারুল ইসলাম জানান, ‘বাড়ির ভেতরে হাঁটুর চেয়ে বেশি পানি জমে আছে। রাস্তায় উঠতে গেলে বুক সমান পানি পার হতে হচ্ছে। রান্নাবান্না বন্ধ, বাজার থেকে শুকনো খাবার কিনে কোনোরকমে দিন পার করছি।’
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই তাদের এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ইসমাইল মোড়ল, ইলিয়াস, জাহাঙ্গীর, আ. করিমসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে। কেউ মারা গেলেও দাফনের জায়গা থাকে না। পানি সরানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। এক বছর আগে আমরা ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু আজও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নাকসা গ্রামবাসী সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে এলাকাবাসী মানবেতর জীবনযাপন করছে। কারণ প্রধান সড়কের দুই পাশের সরকারি জমিতে যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে তা কতিপয় প্রভাবশালী, দুষ্ট প্রকৃতির লোকজন অবৈধভাবে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে লোকমান সরদারের বাড়ি থেকে হামিদ সানার বাড়ি পর্যন্ত প্রধান সড়কের পাশে সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনার ফলে বর্ষা মৌসুমের নামমাত্র বৃষ্টি হলেই নাকসা গ্রামের অধিকাংশ ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকে। গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থতায় ভোগে।
ওই গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মাদ্রাসা ও আটটি জামে মসজিদ রয়েছে। শত শত শিক্ষার্থী জলাবদ্ধতার কারণে স্কুলে যেতে পারছে না। এতে তাদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, আগামীকালই নায়েবকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হবে।