বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা যাচাই করতে হলে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে।’
শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার আয়োজিত গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘নির্বাচনের আগে প্রশাসনের ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিদায় না করলে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। এজন্য জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় পর্যায়ে ভোট আয়োজন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর বিচার দৃশ্যমান না হলে জনগণ কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। আমরা চাই, নির্বাচন সংস্কার হোক। পিআর (প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে ভোট হোক। আমরা কোনো অযৌক্তিক দাবি করছি না। বরং একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিই জানাচ্ছি।’
সমাবেশে জামায়াত নেতা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যেসব মানুষ জীবন দিয়েছেন, যারা রক্ত দিয়েছেন- তাদের সম্মানে জাতির কমন ইস্যুতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের সব ইসলামপন্থিও জাতীয়তাবাদী দলকে এক মঞ্চে আসতে হবে।’
গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে দারিদ্র্য, অনাচার থাকবে না- যেখানে আইন-আদালত ব্যবহার করে ভিন্নমতের মানুষকে নির্যাতন করা হবে না। ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, আলেম-ওলামাদের অবমাননা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে পাঠানো- এসব একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের নিদর্শন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রের মধ্যেই ১৮ কোটি মানুষের মুক্তি নিহিত রয়েছে। জাতি এখন দুই ভাগে বিভক্ত- একদল আল্লাহর আইনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠন চায়, অন্যদল তা চায় না।’
এ সময় চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে বৃহত্তর ইসলামী ঐক্য গঠনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চরমোনাই পীর এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছেন। তার বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন, তারা ইসলামী রাজনীতির বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করছেন। একইভাবে আমাদের আমির ডা. শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধেও যারা কুরুচিপূর্ণ প্রচার চালাচ্ছে, আমরা তাদের ধিক্কার জানাই।’
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থন করছে। কমিশনের কো-চেয়ারম্যান ড. আলী রিয়াজ। আমরা সবাই মিলে সরকারকে সহায়তা করছি। অথচ কেউ কেউ আমাদের সংস্কার দাবিকে নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টা বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী মোস্তফা কামাল, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শুয়াইব হোসেন এবং খুলনা জেলা সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল্লাহ ইমরান।
এ ছাড়া এই গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন খুলনা মহানগর সভাপতি মুফতি আমানুল্লাহ।