‘ইচ্ছাশক্তি বড় শক্তি’- এই প্রবাদটি যেন হুবহু মিলে যায় খুলনার পাইকগাছার এক সংগ্রামী মানুষের জীবনে। জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক অনন্য উদাহরণ গোবিন্দ বিশ্বাস (৫৭)। শত প্রতিকূলতা আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে বাদাম ও ছোলা ভাজা বিক্রি করে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তার পরিবার।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের পুরাইকাটি গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ বিশ্বাস মৃত শক্তিপদ বিশ্বাসের চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট।
ছোটবেলায়, মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় নারকেল গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। এতে তার দুটি হাত ও পা ভেঙে যায় এবং মাথায় আঘাত পায়। দীর্ঘ দুই বছর চিকিৎসার পরও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি, আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার প্রতিবন্ধী জীবনের পথচলা।
মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পিতার অভাবের সংসারে হাল ধরেন গোবিন্দ। শুরু করেন বাদাম ও ছোলা ভাজা বিক্রি। শুরুতে পাইকগাছা সিনেমা হল চত্বরে ফেরি করে বিক্রি করতেন। কিন্তু সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেলে চলে আসেন পাইকগাছা কোর্ট চত্বরে। সেখানে আদালতের সামনে বটগাছের নিচে একটি ছোট্ট টেবিল পেতে প্রতিদিন বাদাম ও ছোলা ভাজা বিক্রি করেন।
প্রতিদিন ২ থেকে ২,৫০০ টাকার মতো বিক্রি হয়, এতে তিনি গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন। এই সামান্য আয়ে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তার পাঁচজনের সংসার। এরই মধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, ছোট মেয়ে পড়ছে ৩য় শ্রেণিতে।
তবে দুশ্চিন্তার বড় কারণ একমাত্র ছেলে রাহুল বিশ্বাস (১৬)। জন্মগতভাবে হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র (হোল ইন হার্ট) নিয়ে জন্মালেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না গোবিন্দ। বর্তমানে রাহুল স্থানীয় বোয়ালিয়া মোড়ের একটি চায়ের দোকানে কাজ করে।
আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে কোর্ট চত্বরে ছোলা ভাজা খাওয়ার ফাঁকে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। গোবিন্দ বলেন, ‘চাইলে ভিক্ষা করতাম, কিন্তু কখনো মন সায় দেয়নি। নিজের মতো করে সংসার চালাচ্ছি। যতদিন শরীরে শক্তি থাকবে, ততদিন এভাবেই চালিয়ে যাবো।’
আদালতে আসা অনেকেই বলেন, তারা গোবিন্দ বিশ্বাসের সংগ্রামী জীবনের বিস্তারিত জানতেন না। তবে তিনি প্রতিবন্ধী জেনেই তার কাছ থেকে বাদাম কিনে খান।