ঢাকা শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কটিয়াদী ঢাকের হাট: পাঁচশো বছরের ঐতিহ্যে বাজে তাক দুম তাক দুম

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৮:০৪ পিএম
ঐতিহ্যে বাজে তাক দুম তাক দুম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

শারদীয় দুর্গোৎসব ঘনিয়ে আসছে। দেশের গ্রামগঞ্জে পূজামণ্ডপ সাজছে রঙ, আলো ও প্রতিমার আভায়। কিন্তু কটিয়াদীর আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে জমে উঠেছে এক ভিন্ন কোলাহল। সেখানে বসেছে বিখ্যাত ঢাকের হাট, যেখানে শুধু বাদ্যযন্ত্র নয়, ভাড়া হয় পুরো বাদক দল।

গতকাল শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই হাটে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, সানাই, বাঁশি, খঞ্জরি, করতালসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের তালে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বাদকেরা নেচে–গেয়ে বাজনা শুনিয়ে মুগ্ধ করেন পূজারি ও আয়োজকদের। তাদের বাজনার গুণেই নির্ধারিত হয় চুক্তির অঙ্ক- কোথাও ১০ হাজার, কোথাও আবার দুই লাখ টাকা পর্যন্ত উঠছে দাম।

মুন্সিগঞ্জের হরি রাজ, কুমিল্লার মোহাম্মদ আলী, বিক্রমপুরের সজীব দাস- প্রত্যেকেই এসেছেন নিজ নিজ দল নিয়ে। কারো স্বপ্ন সংসারের খরচ জোগানো, কারো আশা সন্তানকে নতুন জামাকাপড় বা পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া।

স্থানীয়রা জানান, ষোড়শ শতকে সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় দুর্গাপূজার ঢাকি জোগাড় করতে বিক্রমপুর থেকে ঢাকিদের আনাতেন নৌকায় নৌকায়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় ঢাকের হাট। স্থান বদলিয়ে এটি এখন টিকে আছে কটিয়াদীর পুরাতন বাজার এলাকায়।

ঢাকি নিতে আসা নরসিংদীর রনজিৎ দাস বলেন, ‘ঢাকি ছাড়া পূজা যেন অসম্পূর্ণ। তাই দাম বেশি হলেও কটিয়াদীর ঢাকিই ভাড়া করি।’

মিঠামইনের নারায়ণ সূত্রধর জানান, ‘প্রতি বছর এখান থেকেই ঢাকি ভাড়া নেন।’ কিশোরগঞ্জের দিপেন ভৌমিক প্রথমবার এসে বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘অনেক শুনেছি ঢাকের হাটের নাম, এবার সরাসরি দেখে মুগ্ধ হলাম।’

কটিয়াদী পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সেক্রেটারি জনি কুমার সাহা বলেন, ‘এই হাট ধর্ম–বর্ণের সীমা ছাড়িয়ে বাঙালির উৎসবে রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৬০০ ঢাকি অংশ নেন এই হাটে।’

হাটের নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশও। কটিয়াদী মডেল থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, বাদক ও আয়োজকদের নিরাপত্তায় মোবাইল টিম মোতায়েন রয়েছে।

ঢাকের হাট তাই শুধু বাদক ভাড়ার জায়গা নয়, বরং বাঙালির সাংস্কৃতিক স্মৃতি। দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা পূর্ণতা পায় এখানকার ঢাকিদের ছন্দে-তাক দুম, তাক দুম। পাঁচশো বছরের ঐতিহ্য আজও টিকে আছে কটিয়াদীর এই ঢাকের হাটে।