কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে এক নারীকে গাছে বেঁধে মারধর, মাথার চুল কেটে দেওয়া এবং ঘরে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৯ জুন) রাতে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, বিকেলে ওই নারী প্রতিবেশী রিপন আলীর বাড়িতে যান। এ সময় রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন অভিযোগ করেন, ওই নারী তাদের ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করছিলেন। তখন তাকে হাতেনাতে ধরে এনে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়। কিছুক্ষণ পর তার স্বামী এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
পরে রাত ৮টার দিকে এলাকার কয়েকশ নারী-পুরুষ রিপন, কাশেম ও নজরুলের নেতৃত্বে ওই নারীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এরপর তাকে ফের ধরে এনে রিপনের বাড়িতে আবারও মারধর করা হয় এবং মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহ আলমের উপস্থিতিতে একটি সালিশ বসে। অভিযোগ রয়েছে, সেই সালিশে ওই নারীর দুটি গরু, একটি ছাগল ও সোনার অলংকার রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ওই নারী কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ও মাথার চুল কাটা। তার বাড়ির দরজায় তালা লাগানো অবস্থায় দেখা গেছে, ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে এবং গোয়ালঘরে নেই গরু-ছাগল।
ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি রিপনকে ডাকতে গিয়েছিলাম। তখন তার স্ত্রী মুক্তি খাতুন মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে আমাকে বেঁধে রাখে। পরে রাতে অনেক লোকজন নিয়ে এসে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে পিটিয়েছে। আমার চুল কেটে দিয়েছে। ঘরে লুটপাট চালিয়ে গরু, ছাগল, সোনার গয়না নিয়ে গেছে। আমি এর বিচার চাই।’
অন্যদিকে, অভিযুক্ত রিপন বলেন, ‘ওই নারী আমাদের ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করেছে। এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’ তার স্ত্রী মুক্তি খাতুনও স্বীকার করেন আমি তাকে বেঁধে একটি চড় মেরেছি। তবে কারা চুল কেটেছে জানি না।
এ ঘটনায় ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, ‘আমি শুধু সালিশে উপস্থিত ছিলাম এবং ওই নারীকে স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। এর বাইরে কিছু জানি না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া সঠিক হয়নি।’
কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ বলেন, ‘চুল কেটে দেওয়া ও মারধরের ঘটনার খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তখন ভুক্তভোগীকে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :