লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের স্কুলশিক্ষক ছায়েদ উল্লাহর ছোট ছেলে আরফাত হোসেন এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে এই শিক্ষক বাবার ৬ সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেন।
একই বাবার ৬ সন্তান দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে বা পড়ছে এমন নজির নেই বললেই চলে। সন্তানদের এমন সাফল্যে সুনাম কুড়াচ্ছেন শিক্ষক বাবা।
এদিকে, সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছে ছায়েদ উল্লাহকে। এতে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই ছায়েদ উল্লাহ ও তার স্ত্রী শামীমা বেগমের। ছায়েদ উল্লাহ নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার দক্ষিণ ওয়াপদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি অবসরে যান।
শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ বলেন, ‘আরাফাত আমার ছোট ছেলে। সে ২০২৫-২৬ সালে শিক্ষাবর্ষে ‘এ’ ইউনিটে ঢাবিতে ভর্তি হয়েছে। আমার একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ঢাবিতে ওমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্ট্যাডিজ বিভাগে অধ্যয়নরত। একে একে আমার ৬ সন্তান ঢাবিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।’
এর আগে ২০২২ সালের ২৯ জুন ‘শিক্ষক বাবার ৫ সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ শিরোনাম দেশের একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে নিউজ প্রকাশিত হয়।
শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষকতার সৎ উপার্জন দিয়ে ছায়েদ তার সন্তানদেরকে পড়ালেখা করিয়েছেন। তার বড় ছেলে শামসুল আলম দিপু ২০০৭-০৮ সেশনে ঢাবিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে ভালো ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।
এরপর ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। পরে সে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। বর্তমানে তিনি সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটে পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
দ্বিতীয় ছেলে শাজাহান সিরাজ আল মামুন ২০১০-১১ সেশনে ঢাবিতে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে সে লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে। মামুন কর্মসংস্থান ব্যাংকের চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
তৃতীয় ছেলে আশরাফুল ইসলাম শহীদ ঢাবিতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। শহীদ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
চতুর্থ ছেলে শরীফুল ইসলাম বিজয় ২০১৬-১৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছেন। তিনি এখন বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘৩০ বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। ছেলে-মেয়েদেরকে সুশিক্ষিত করার জন্য সর্বদাই সচেষ্ট ছিলাম।’
‘তারা কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার গৌরব অর্জন করেছে। তাদের এ অর্জনে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’
স্থানীয় উদয়ন আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহর সন্তানরা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের অর্জন কমলনগরবাসীকে গৌরবান্বিত করেছে। তাদের কৃতিত্ব সমাজকে আলোকিত করছে।’