মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুজ্জামান হাসান (কালীগঞ্জ) লালমনিরহাট

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০১:০৫ পিএম

হতাশার ফসলে পরিণত হয়েছে আলু, লোকসানে কৃষকরা

হাসানুজ্জামান হাসান (কালীগঞ্জ) লালমনিরহাট

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০১:০৫ পিএম

ছবি:  রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

লালমনিরহাটের বত্রিশহাজারী গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন চলতি মৌসুমে তিন একর জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। শুরুতে আশানুরূপ ফলন পেয়ে তিনি খুশি ছিলেন; প্রতি একরে গড়ে ৯ হাজার কেজি আলু উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু বাজারে আলুর দাম কমে যাওয়ায় এখন তিনি বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন।

লোকমান হোসেনের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি একরে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ টাকা। তিনি আশা করেছিলেন, আলু বিক্রি করতে পারবেন প্রতি কেজি ২৫ টাকায়।

কিন্তু মৌসুমে অর্ধেক আলু বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ১৫ টাকায়। বাকি ৮ হাজার কেজি আলু স্থানীয় হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন, এবং বাড়িতে রেখে ধীরে ধীরে বিক্রি করছেন। সামান্য কিছু আলু সর্বোচ্চ ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পেরেছেন।

লোকমান বলেন, ‘হিমাগারে আলু রেখেছিলাম বেশি দামে বিক্রির আশায়, কিন্তু এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। এতে খরচও উঠছে না। আলু চাষের জন্য স্থানীয় সমিতি থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। প্রতিমাসে ৯ হাজার টাকা সুদ দিচ্ছি। এই মৌসুমে পুঁজির প্রায় ৭০ শতাংশ হারিয়েছি। এখন হয়তো জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।’

একই অবস্থা লালমনিরহাটের অন্যান্য আলুচাষিদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। আদিতমারীর নামুড়ি এলাকার একাব্বর আলী প্রায় দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিন একর জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। লোকসানের কারণে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ঋণদাতারা এখন তার বাড়িতে আসছেন।

খায়রুল ইসলাম ৭ একর জমিতে আলু চাষ করে ৬৩ হাজার ৪০০ কেজি উৎপাদন পেয়েছেন। তিনি মৌসুমে ২৩ হাজার ৪০০ কেজি বিক্রি করেছেন ১৪ টাকায়, বাকি ৪০ হাজার কেজি হিমাগারে রেখেছেন। হিমাগারে সংরক্ষণের খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকা। স্থানীয় সমিতি ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে তিনি একাধিক উদ্যোগ নিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর রংপুর বিভাগের আট জেলায় দুই লাখ ২৫ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে চার লাখেরও বেশি কৃষক আলু চাষ করেছেন। উৎপাদন হয়েছে ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ৯৯২ টন। মোট ১১৬টি হিমাগারে সংরক্ষিত আছে প্রায় ১১ লাখ ৯ হাজার টন আলু, যার ৪০ শতাংশ এখনও হিমাগারে রয়েছে।

কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, সরকার ন্যায্যমূল্যে আলু ক্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। কৃষি, বাণিজ্য, খাদ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বৈঠক করে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

কালীগঞ্জের আলুচাষি লিখন মিয়া বলেন, ‘সরকার দ্রুত আলু ক্রয় কার্যক্রম শুরু করে শেষ করতে হবে। অতিরিক্ত আলু সংরক্ষণে হিমাগার ডিসেম্বরে পর্যন্ত খোলা রাখার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার যদি কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে নেন, তারা ন্যায্যমূল্য পাবেন। এ বছরের লোকসান আগামী মৌসুমে আলুচাষে নিরুৎসাহ সৃষ্টি করতে পারে। পরিকল্পিত চাষ ও হিমাগার ব্যবস্থাপনা জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উৎপাদনের তুলনায় হিমাগারের সংখ্যা কম থাকায় সংরক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে। বাজারে অতিরিক্ত আলু থাকায় দর আরও কমে যাচ্ছে। সরকারের কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!