ঢাকা মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

‘সরকার যায় সরকার আসে, আমাগো ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না’

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০৮:০৪ পিএম
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে স্থানীয় গ্রামবাসীর মানববন্ধন করেছে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায় যমুনা নদীতে রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে বিলীন হওয়ার পথে চরাঞ্চলের বাড়িঘর ও কৃষিজমি। এতে চরম শঙ্কায় দিন পার করছে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।

এ পরিপ্রেক্ষিতে চর রক্ষা ও রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে বাঘুটিয়া, পারুরিয়া, বাচামারা, চন্ডীপ্রসাদ (ইসলামপুর), জোতকাশি ও পাচুরিয়া মৌজায় ড্রেজিং কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় গ্রামবাসী।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে বাঘুটিয়া চরে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে বয়স্ক নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ও শিশুরাও অংশ নেয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি অবৈধভাবে আবাদি জমিতে ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। বিগত দশ বছরে শত একর কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটেমাটি হারিয়েছেন শতাধিক পরিবার। বছরের পর বছর তারা বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু প্রতিদিনই ভারি হচ্ছে বঞ্চনার পাল্লা।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন রাতে ঘুম আসে না। নদীর দিকে তাকালে মনে হয় কাল সকালে হয়তো বাড়িঘর থাকবে না। সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাব আমরা? সরকার যায়, আর সরকার আসে, আমাগো ভাগ্যের আর পরিবর্তন হয় না।’

৭০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুল হাকিম আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘এই চরটি শুধু কৃষি উৎপাদনের জন্য নয়, বরং বহু পরিবার প্রজন্ম ধরে এখানে বসবাস করছে। চরটি হারিয়ে গেলে তাদের জীবিকা, ইতিহাস ও সংস্কৃতি সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘এই চরেই আমার বাবার কবর, আমার শৈশবের স্মৃতি। ড্রেজারের শব্দ শুনলেই বুক কেঁপে ওঠে। মনে হয় সবকিছু নদীর গর্ভে চলে যাবে। চোখের সামনে প্রতিদিনই জমি হারিয়ে যেতে দেখেছি, কিছুই করতে পারছি না।’

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে স্থানীয় গ্রামবাসীর মানববন্ধন করেছে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

স্থানীয় কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এই চরেই আমাদের ফসল হয় — ধান, গম, পাট, ডাল। ড্রেজিংয়ের কারণে জমি নদীতে চলে যাচ্ছে, আমরা কৃষি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে।’

মানববন্ধনে বক্তারা জানান, অবৈধ ড্রেজিং বন্ধে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিতে গ্রামবাসীসহ গিয়েছি, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন, অবিলম্বে অবৈধ ড্রেজিং বন্ধ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এলাকাবাসী ড্রেজার মেশিন গুঁড়িয়ে দেবে। তার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।

এ সময় বাঘুটিয়া আলিম মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম, বাঘুটিয়া ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, জয়নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকসহ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।

অবৈধ ড্রেজার বন্ধ ও চর রক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. মানোয়ার হোসেন মোল্লার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

তবে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিয়ান নূরেন বলেন, ‘ইজারাকৃত এরিয়ার বাইরে যেন বালু উত্তোলন করা না হয়, সে ব্যাপারে ইজারাদারদের ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করে নির্ধারিত এরিয়ার বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’