ইসলামে কোরবানি একটি মহান ইবাদত। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নির্দিষ্ট পশু জবাই করা হয়, আর সেই পশুর মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট গুণাবলি থাকা আবশ্যক।
কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোরবানির পশু হতে হবে সুস্থ, ত্রুটিমুক্ত ও নির্দিষ্ট বয়সের। অসুস্থ বা বিকলাঙ্গ পশু দ্বারা কোরবানি করলে তা গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই কোরবানির পশু কেনার সময় শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা করে কেনা অত্যন্ত জরুরি।
হাদিস শরিফে চার ধরনের পশুকে কোরবানির জন্য অনুপযুক্ত বলা হয়েছে-
১. যার চোখ পরিষ্কার অন্ধ,
২. যে স্পষ্টভাবে অসুস্থ,
৩. যে ল্যাংড়া বা খোঁড়া,
৪. যে এত দুর্বল যে হাড়ে মাংস নেই (তিরমিযী ও আবু দাউদ)।
এ ছাড়া কানে কাটা, লেজ কাটা, দাঁত ভাঙা, বা কান সম্পূর্ণ ছিন্ন – এমন গরুও কোরবানির অযোগ্য। তাই এসব দিক থেকে সুস্থ, পরিপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গযুক্ত গরুই নির্বাচন করতে হবে।
বয়স যাচাই করা
ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, গরুর বয়স কমপক্ষে দুই বছর পূর্ণ হওয়া আবশ্যক। গরুর বয়স নির্ধারণে দাঁতের গঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণভাবে বলা হয়, গরুর দুটি সামনের দুধদাঁত পড়ে গিয়ে নতুন দুটি স্থায়ী দাঁত উঠলে সেটি দুই বছর বয়স হয়েছে ধরে নেওয়া যায়। এই প্রক্রিয়াকে ‘দাঁত দেখা’ বলা হয়, যা অভিজ্ঞ কেউ সহজে চিনে ফেলতে পারেন।
রোগমুক্ত গরু চেনার কৌশল
একটি সুস্থ গরু সাধারণত চটপটে থাকে, খাবারে আগ্রহী হয় এবং জাবর কাটে। তার চোখ উজ্জ্বল, নাক পরিষ্কার এবং লোম চকচকে হয়। অসুস্থ গরুর ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ উল্টো দেখা যায়- চোখে পানি, নাকে শ্লেষ্মা, পেট ফোলা, অথবা অস্বাভাবিক হাঁটা। অনেক সময় ইনজেকশন দিয়ে গরুকে মোটা করে তোলা হয়, যেটি শরিয়তসম্মত নয় এবং স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
পশু বিশেষজ্ঞ বা ভেটেরিনারির সাহায্য নেওয়া
যদি আপনি গরুর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে না পারেন, তবে একজন পশু চিকিৎসক বা গরু চেনায় অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নেওয়া উত্তম। শরিয়তের বিধি অনুসারে কোরবানির জন্য পশু নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই কারও পরামর্শ নেওয়া বা যাচাই করে নেওয়া বরং দায়িত্বশীল কাজ।
কোরবানির পশু সুস্থ ও শরিয়তসম্মত হওয়া ইবাদতের অন্যতম শর্ত। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী গরুর বয়স, শারীরিক গঠন ও রোগমুক্ত অবস্থার দিকটি যাচাই করে গরু কেনা উচিত। এতে কোরবানি সহীহ হবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে। তাই হাটে গিয়ে শুধু গরুর বাহ্যিক রূপ নয়, শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কিনা, সেটিও ভালোভাবে যাচাই করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।
আপনার মতামত লিখুন :