ঢাকা সোমবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৫

প্রভাবশালীদের অবৈধ মাছের ঘেরে দিশেহারা জেলেরা

গজারিয়া (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৮:১২ পিএম
নদী ও শাখানদীতে প্রভাবশালীদের অবৈধ মাছের ঘের। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ফুলদী নদীসহ বিভিন্ন শাখানদীতে প্রভাবশালীদের দখলে গড়ে ওঠা অবৈধ মাছের ঘের বা ঝোপের কারণে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার দরিদ্র ও খেটেখাওয়া সাধারণ জেলে পরিবারগুলো। নদীর স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হয়ে এখন এসব নদী হয়ে উঠেছে মাছ ধরার অযোগ্য।

উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ষোল আনী এলাকা হয়ে রসুলপুর গ্রামসংলগ্ন মেঘনার শাখানদী ফুলদী নদীর দুই পাশে, হোসেন্দি বাজার পর্যন্ত প্রভাবশালীরা অবাধে গড়ে তুলেছে এসব অবৈধ ঘের (ঝোপ)। কাজলা নদী স্থানীয়ভাবে ‘মেনিখালী’ নামে পরিচিত ফুলদী নদীর শাখানদীতেও একাধিক অবৈধ ঘের দেখা যায়। জামালদি এলাকায় হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই নদীর বুকে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল এক ঝোপ, তার সামনেও রয়েছে আরও একাধিক ঘের।

একই চিত্র দেখা যায় উপজেলার বাউশিয়া, বালুকান্দি, গজারিয়া, গুয়াগাছিয়া ও টেংগারচর ইউনিয়নের নদীগুলোতেও। গজারিয়ায় সাধারণ জেলেদের মধ্যে শতাধিক অবৈধ ঘের বা ঝোপ তৈরি করেছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল। তবে প্রশাসনের অভিমত, প্রায় ৮০টি অবৈধ ঝোপ বা ঘের রয়েছে।

নদীর মাঝ বরাবর বাঁশ, কচুরিপানা, গাছের ডালপালা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি এসব ঝোপে নদীর পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এসব ঘেরকে কেন্দ্র করে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়ছেন।

একাধিক জেলে অভিযোগ করেন, ‘নদীতে ঘের থাকার কারণে আমরা জাল ফেলতে পারি না। মাছ মারতে গেলে ঘের মালিকরা বাধা দেয়, মারধর করে, এমনকি জাল কেটে দেয়। এতে আমরা সংসার চালাতে পারছি না। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জীবন এখন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। জেলেদের অভিযোগ, এসব অবৈধ ঘেরের কারণে মাছের সংখ্যা কমে গেছে, জেলে পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।

গজারিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল ছামাদ বলেন, ‘নদীতে বাঁশ ও ডালপালা দিয়ে তৈরি ঘের বা ঝোপ আইনত অবৈধ। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয় এবং মাছের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা ইউএনও স্যারসহ অবৈধ ঝোপ মালিকদের সঙ্গে বসেছি এ মাসের ৩ তারিখ তারা আমাদের অঙ্গীকার দিয়েছে আগামী দেড় মাসের মধ্যে সকল অবৈধ ঝোপ বা ঘের গজারিয়ার সকল নদী থেকে উঠিয়ে নেবে। তা ছাড়া আমার দপ্তর এসব অভিযান পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নেই—সে জন্য ইচ্ছে থাকলেও উচ্ছেদ অভিযান করতে পারি না। আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যে ইউএনও স্যার এর সহায়তায় দুই একটি ঝোপ বা ঘের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করব।’

সাধারণ জেলেদের অভিযোগ, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের জোগসাজশে অবৈধ ঘের তৈরি করা হয়েছে—সেখানে মাছ শিকার করতে গেলে নানা বাধার শিকার হতে হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, ‘আগে হয়তো কারও সঙ্গে লিয়াজোঁ থাকতে পারে, তবে আমার সঙ্গে কারও সম্পর্ক নেই। যদি এমন একটি প্রমাণ দিতে পারেন আমি নিজে রিজাইন দিয়ে চলে যাব। আগের এসি-ল্যান্ডসহ হয়তো দু-একজন খারাপ থাকতে পারে বর্তমানে সকলে ভালো আছে। অর্থ বরাদ্দ থাকলে কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সহায়তা করলে আমরা অভিযান চালিয়ে যাব। তা ছাড়া এগুলো উচ্ছেদ করতে আমাদের পাশে গজারিয়ার সচেতন সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কিছু অসাধু ব্যক্তি অবৈধভাবে ঘের তৈরি করছে। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং অবৈধ ঘের উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তা ছাড়া জেলেরা কখনো তো আমাদের কাছে অভিযোগ করল না, যে তারা মাছ শিকার করতে পারে না বা মাছ শিকার করতে গেছে জাল নিয়ে যায়, কেটে ফেলে, মারধর করে।’

গজারিয়ার আটটি ইউনিয়নের প্রায় সব নদীতেই এমন অবৈধ ঘেরের দাপটে জেলেরা আজ জীবিকাহারা। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান ও কঠোর তদারকি ছাড়া এই নদীগুলোর প্রাণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল।