শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ১০:৫৭ পিএম

ময়মনসিংহ নগরীজুড়ে আতঙ্ক-বিশৃঙ্খলা, একের পর এক ওসি বদলি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ১০:৫৭ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহে পুলিশ বিভাগে ঘন ঘন ওসি বদলির কারণে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে এবং এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীচক্র। গত ১০ মাসে কোতোয়ালী মডেল থানা ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখায় ৮ জন কর্মকর্তার বদলি হয়েছে। এই অস্থিরতার ফলে নগরীতে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, খুনসহ নানা অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে অভিযোগ নাগরিক সমাজের।

গত ১৮ জুন (বুধবার) সকাল ১০টায় ময়মনসিংহ নগরীর প্রাণকেন্দ্র গাঙ্গিনারপাড় এলাকার ব্যস্ততম শপিংমল অলকা নদী বাংলা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার মোবাইল মার্কেটে চুরির ঘটনা ঘটে। জিরো পয়েন্ট মোবাইল শপ নামের দোকানের তালা ভেঙে ৫-৬ জন অজ্ঞাতনামা যুবক দোকানে চুরির ঘটনাটি ঘটায়। 

মোবাইল ফোনের দোকানের স্বত্বাধিকারী হৃদয় খানের ভাষ্যমতে, ‘তার দোকানে ২৮০টির মতো মোবাইল ফোন ছিল। সকাল ১০টার দিকে দুর্বৃত্তরা তার দোকানের ভিতর প্রবেশ করে আনুমানিক ২৫০টি মোবাইল নিয়ে যায়। এছাড়াও তার ক্যাশ বাক্স ভেঙে ১০ লাখ টাকা নিয়ে যায়। তার অভিযোগ, এতে প্রায় এক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। 

এর আগে ১৭ জুন (মঙ্গলবার) দিবাগত রাত একটায় নগরের জিলা স্কুল মোড়ে অবস্থিত ‘চাচার হোটেল’ নামক রেস্তোরাঁর মালিককে নিজ বাড়িতে আটকে রেখে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রেস্তোরাঁ মালিকের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন কোতোয়ালি মডেল থানা একটি মামলা দায়ের করেন। 

মামলায় বলা হয়, রাত ১টার সময় অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন ব্যক্তি তাদের জিলা স্কুলের মোড় সংলগ্ন বাসভবনে প্রবেশ করে তাদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে নগদ ২৩ লাখ টাকা এবং আনুমানিক দুই লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে গেছে।

এর আগে ওই দিন দুপুরেই নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় এক ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে ছিনতাইকারীরা লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। দিবালোকে এমন দুঃসাহসিক ছিনতাইয়ের ঘটনা নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি নির্দেশ করে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। 

এদিকে গত ১৬ জুন (সোমবার) ভোরে নগরের মিন্টু কলেজ রেলক্রসিং সংলগ্ন অটোরিকশার যাত্রী এক যুবকের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ঘড়ি এবং মানিব্যাগ ছিনতাই করে তিন যুবক। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা সমালোচনা সৃষ্টি হয়। 

এছাড়া, এ দিন নগরীর ক্লিনিক মালিক সমিতি চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। তারা অভিযোগ করেন, স্থানীয় কিছু চক্র ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত চাঁদা দাবি করে আসছিল এবং চাঁদা না দিলে বিভিন্ন ধরনের হুমকিও দিয়ে আসছিল। ক্লিনিক মালিকরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানালেও তাদের দাবি, এখনো তেমনই রয়ে গেছে।

সম্প্রতি ছিনতাইকারির কবলে পড়েন মো. মনিরুল হক (৩১), তিনি আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখায় কর্মরত। তিনি কর্মস্থল থেকে অটোরিকশায় করে বাসায় ফিরছিলেন। মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাইপাস এলাকায় পৌঁছামাত্র কয়েকজন যুবক তার পথরোধ করে। 

ঘটনার পরপরই কোতোয়ালী মডেল থানার ৩ নম্বর ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল অভিযানে নামে। অভিযানে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখার ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান বলেন, আমাদের সহকর্মী ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার পাশাপাশি শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কারণে আতঙ্কিত। অফিসের সবাইকে সতর্কতা মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। 

এভাবে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ময়মনসিংহ নগরীর সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা প্রশ্ন তুলছেন, দিনের পর দিন এভাবে অপরাধ চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?

নগরবাসীর দাবি, প্রশাসনকে এসব ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে দোষিদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং নগরীতে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ‘সম্প্রতি শহরে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতির কারণে চুরি, ছিনতাই, খুন এবং অসামাজিক ঘটনা ঘটছে। জুলাই বিপ্লবের পর পুলিশের অবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় এমন হচ্ছে। রাজনৈতিক মধ্যস্থতায় তারা নিজেদের ব্যস্ত রাখায় সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরছে না। পুলিশ নৈতিকভাবে তারা দায়িত্ব পালন করলে সামাজিক শৃঙ্খলা পূর্বের ন্যায় ফিরে আসবে।’

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত আইজি (ফিন্যান্স) আবু হাসান মুহম্মদ তারিক স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ৩২ পুলিশ কর্মকর্তাকে নৌ-পুলিশ, টুরিস্ট, সিআইডি, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, হাইওয়ে ও পিবিআই পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে বদলি করা হয়।

পরে ২২ সেপ্টেম্বর জেলা পুলিশ সুপার মো. আজিজুল ইসলাম সই করা এক অফিস আদেশে জেলার ১২টি থানায় ১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে নতুন করে পদায়ন করা হয়। নতুন পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে মো. সফিকুল ইসলাম খানকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়।

পরবর্তিত থানাগুলোর ওসি বদলি ও পদায়নের মধ্য দিয়ে পুলিশ কর্মমুখর হয়ে থানার কার্যক্রম ও সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে আসে। তবে চলতি বছরের ৫ মে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-২ শাখা থেকে এআইজি মো. মিনহাজুল আলম স্বাক্ষর করা চিঠিতে কোতোয়ালী মডেল থানার মো. সফিকুল ইসলাম খানসহ জেলার আরও ৫ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।

এরপর ১৮ মে পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম স্বাক্ষর করা এক আদেশে জেলার ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মিজানুর রহমানকে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়। পরদিন মিজানুর রহমান থানায় যোগদান করন। কিন্তু তিনি ছিলেন নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় বিএনপি নেতা নুরনবী বাচ্চুর দায়ের করা একটি মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি। এটি জানতেন না স্থানীয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। থানার ওসি হিসেবে পদায়নের পরপরই ঘটনাটি জানাজানি হলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে ২২ মে বিকেলে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলম সমালোচনার মুখে তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড (সংযুক্ত) করেন।

এদিকে গত ৪ জুন কোতয়ালী থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগদান করেন মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন। তিনি যোগদানের পর থেকেই নগরীতে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নগরীরবাসীরা।

এমন পরিস্থিতিতে মাত্র ১৯ দিনের মাথায় গত ২৩ জুন সন্ধ্যায় তাকে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করা হয়। একই সঙ্গে প্রত্যাহার করা হয় থানার দুজন উপ-পরিদর্শককেও।

প্রত্যাহার আদেশে বলা হয়, অত্র রেঞ্জাধীন ময়মনসিংহ জেলায় কর্মরত নিম্নবর্ণিত নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক/এসআইদের কর্তব্যকর্মে অবহেলা, কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য তথা অসদাচরণের দায়ে প্রশাসনিক কারণে তাদের নামের পার্শ্বে বর্ণিত জেলা/ইউনিটে সংযুক্ত করা হলো। সর্বশেষ গফরগাঁও থানারওসি মো. শিবিরুল ইসলামকে কোতোয়ায়ালী মডেল থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এদিকে, ৫ আগস্টের পর জেলা গোয়েন্দা শাখার ৪ ওসিকে বদলি করা হয়েছে। আগস্টে জেলা গোয়েন্দা শাখায় ওসি হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন ফারুক হোসেন। পরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ফারুক হোসেনকে বদলি করা হয়। তার পরে দায়িত্বে আসেন শহিদুল ইসলাম। কিছু দিনের মাঝে শহিদুল ইমলামকে বদলি করে দায়িত্ব দেওয়া হয় আবুল হোসেনকে। সর্বশেষ আবুল হোসেনকে বদলি করে দায়িত্ব দেওয়া হয় মহিদুল ইসলামকে। 

ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, বদলি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কর্মকর্তাদের বদলির সঙ্গে অপরাধের কোনো সম্পর্ক নেই। দিনেদুপুরে অলকা নদী বাংলা কমপ্লেক্সে জিরো পয়েন্ট মোবাইল শপ নামের দোকানের তালা ভেঙে চুরির ঘটনায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি ঘটে প্রত্যেকটি ঘটনা তদন্ত চলছে এবং তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ আতাউল কিবরিয়ার নাম্বারে ৩ দিনে অন্তত ১৫ বার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Shera Lather
Link copied!