ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

উচ্ছেদ করা হলো আ. লীগ নেতার চিড়িয়াখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৮:৪৬ পিএম
উচ্ছেদ অভিযানে গুঁড়িয়ে দিয়েছে আ. লীগ নেতার চিড়িয়াখানা জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের অভ্যন্তরে আওয়ামী লীগ নেতার নিয়ন্ত্রণে থাকা অবৈধ মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক গুঁড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে ‘কিডস জোন’ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, জয়নুল আবেদিন উদ্যানে অবস্থিত মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের ভূমির ইজারা বাতিল করে গত ২৬ জুন ইজারাগ্রহীতা মো. সেলিম মিয়াকে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে তিন দিনের মধ্যে অবকাঠামো ও পশুপাখি সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানানো হয়। সেলিম মিয়া মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানের শ্যালক।

চলতি বছরের ৮ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন মাহবুবুর রহমান। যদিও ইজারা সেলিম মিয়ার নামে নেওয়া হয়েছিল, তবে চিড়িয়াখানাটি নিয়ন্ত্রণ করতেন মাহবুবুর রহমান।

২০১৪ সালের ৩০ জুন তৎকালীন পৌরসভা ১০ বছরের জন্য মিনি চিড়িয়াখানাটি ইজারা দেয়। ২০২৪ সালের ৩০ জুন ইজারার মেয়াদ শেষ হয়। ৬ লাখ টাকায় চুক্তি হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। পার্শ্ববর্তী জমিটি ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মাসিক ১ হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তি হয়, যার জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়। এটিও ‘সেলিম এন্টারপ্রাইজ’-এর নামে ইজারা নেওয়া হয়।

সিটি করপোরেশনের চুক্তি বাতিল প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুপার্কের বিষয়টি ইজারাচুক্তিতে গোপন রাখা হয় এবং নিয়মিত ভাড়া না দিয়ে দীর্ঘদিন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে, যা চুক্তিপত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দুপুর ১২টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলামসহ তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও বন বিভাগের প্রতিনিধিরা অভিযানে অংশ নেন। একই সঙ্গে জয়নুল উদ্যানের আশপাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটও উচ্ছেদ করা হয়।

শুরুতেই চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলো বন বিভাগের হেফাজতে নেওয়া হয়। ময়মনসিংহ রেঞ্জের বন কর্মকর্তা রিদুয়ানুল হক জানান, ‘চিড়িয়াখানাটি ছিল অবৈধ। জেলা প্রশাসন উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের চিঠি পাঠায়। আমরা পাঁচটি হরিণ, দুটি ময়ূর, একটি গাধা, কিছু ঘুঘু ও দুটি ইমু পাখি উদ্ধার করেছি। এসব বন্যপ্রাণী গাজীপুর সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হবে।’

সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নগরীর শিশুদের জন্য অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র ছিল এই মিনি চিড়িয়াখানা। এটি ভেঙে ফেলার ফলে শিশুদের পশুপাখি সম্পর্কে জানার একটি সুযোগ হারালেও আমরা চাই সিটি করপোরেশন দ্রুত নতুন কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’

বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলা উচ্ছেদ অভিযানে খননযন্ত্র দিয়ে চিড়িয়াখানা ও পার্কের স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, ‘চুক্তির শর্ত ভঙ্গ ও অর্থ পরিশোধ না করায় মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখানে ‘কিডস জোন’ নির্মাণ করা হবে। সেখানে লাইব্রেরি, খেলনা, রাইড এবং বাগান থাকবে, যেখানে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারবে।’