ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পাওনা টাকা না পেয়ে ব্যানার টাঙিয়ে প্রতিবাদ ইনতাজ আলীর

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম
পাওনা আদায়ে টাঙানো ইনতাজ আলীর ব্যানার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহের নান্দাইলে পাওনা টাকা আদায়ে ইনতাজ আলী অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। টাকা আদায়ে হতদরিদ্র কাঠুরে ইনতাজ ব্যাপারী স্থানীয় বাজারে ডিজিটাল ব্যানারে দেনাদারের নাম ও পাশে টাকার পরিমাণ লিখে সাঁটিয়ে দিয়েছেন।

উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের টঙ্গীরচর মোড় বাজারে ডিজিটাল ব্যানারটি সাঁটানো রয়েছে।

ব্যানারে লেখা হয়েছে, ‘ইনতাজ আলী পাওনাদার- দিলু ব্যাপারী ৬ হাজার টাকা, হুমায়ুন ব্যাপারী ২ হাজার ৬০০, সুজন ব্যাপারী ৭৫০, নজরুল ব্যাপারী ২ হাজার ৪০০, বারেক গাছের ব্যাপারী ১৩ হাজার ও রতন গাছ কাটে ২০০ টাকা।’

৫ বছর ধরে বেশকিছু লোকের কাছে তার প্রায় ২৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। টাকা পেতে লোকের বাড়িতে গিয়ে অনুনয়-বিনয় করেও টাকা আদায় করতে পারেননি ইনতাজ আলী। সেইজন্য তিনি পাওনা টাকা আদায়ে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।

এ ধরনের অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করায় সাধারণ লোকজন এটাকে এক ধরনের প্রতিবাদ মনে করলেও আবার কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে শত্রুতার আশঙ্কাও করছেন।

ইনতাজ আলী উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের টঙ্গীরচর এলাকার মৃত জুম্মন খানের ছেলে।

গাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করতেন ষাটোর্ধ্ব ইনতাজ আলী ব্যাপারী। এখন বয়সের ভারে আর আগের মতো কাজ করতে পারছেন না। ৫ বছর ধরে বেশকিছু লোকের কাছে তার প্রায় ২৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। টাকা পেতে লোকের বাড়িতে গিয়ে অনুনয়-বিনয় করেও টাকা আদায় করতে পারেননি ইনতাজ আলী।

এমনকি থানায় অভিযোগ করেও টাকা আদায় করতে পারেননি। এ অবস্থায় হতদরিদ্র কাঠুরে ইনতাজ ব্যাপারী স্থানীয় বাজারে ডিজিটাল ব্যানারে দেনাদারের নাম ও পাশে টাকার পরিমাণ লিখে সাঁটিয়ে দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ইনতাজ আলীর কোনো জমিজমা নেই। পেশায় কাঠুরে হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এলাকার ৬ জনের কাছে গাছ কাটা বাবদ বিভিন্ন সময়ে বকেয়া রয়েছে কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা। এই টাকা উদ্ধারে তিনি গত প্রায় ৫ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এর মধ্যে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো কাজে আসেনি। পরে বাধ্য হয়ে তিনি একটি ডিজিটাল ব্যানারে ৬ জনের নাম লিখেছেন, নামের পাশে টাকার পরিমাণ লিখে বেশ কয়েকটি স্থানে টাঙিয়ে দিয়েছেন।

আর ব্যানারের নিচে লেখা রয়েছে- ‘থানা থেকে অর্ডার, এই বিষয়টা এলাকাবাসীকে জানানোর জন্য। যদি এই টাকা না দেন তাহলে থানায় মামলা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কান্না করে বলেন, ‘আমি অহন (এখন) মরণের পথো। বাবা ভাই ডাইক্যা, পাও ধইর‌্যাও টেহা (টাকা) পাই না। এর লাইগ্যা হেরারে (দেনাদার) শরম দিতে ও মাইনসেরে জানানোর লাইগ্যা এই কাম করছি। অহন টেহা না দিলে মাইক লইয়া বাইর অইয়াম।’

এলাকার স্থানীয় লোকজন জানান, ইনতাজ আলী অত্যন্ত সহজ-সরল মানুষ। সৎভাবে জীবনযাপন করেন। এরপরও তার পাওনা টাকা দিচ্ছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর একটা বিচার হওয়া দরকার।

এ ব্যাপারে দেনাদার বেশ কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চাইলে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নান্দাইল থানার ওসি খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহবুব জানান, পাওনা টাকা না দেওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তবে এভাবে প্রচার না করাই ভালো। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।