ময়মনসিংহের ত্রিশালে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত একমাত্র ছেলের হাতে বাবা-মা খুন হয়েছেন। হত্যার পর তাদের মরদেহ ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখেন ছেলে। এ ঘটনায় ছেলে রাজুকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের বাসকুড়ি গ্রামে একটি ঘরের মেঝে খুঁড়ে দুটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতরা হলেন কৃষক মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী বানুয়ারা বেগম। তারা বৈলর ইউনিয়নের বাসকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। ওই দম্পতির তিন মেয়ে ও একমাত্র ছেলে রাজু। সেই ছেলের হাতেই খুন হন তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত রাজু গত বুধবার দুপুরে তার মাকে গলা টিপে হত্যা করেন। রাতে বাবা বাড়ি ফেরার পর কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে তাকেও হত্যা করেন। এরপর শোবার ঘরের বিছানার পাশে মেঝে খুঁড়ে মরদেহ দুটি পুঁতে রাখে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজু নিজেই তার বোনদের খবর দিয়ে জানান, মা-বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর বোনেরা শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে প্রতিবেশীদের নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। শোবার ঘরে ঢুকে নতুন মাটি খোঁড়া অবস্থায় দেখতে পান তারা। এতে সন্দেহ হলে রাজুকে আটক করে খবর দেওয়া হয় ত্রিশাল থানা পুলিশকে।
পরে রাজুর দেখানো মতে ঘরের বিছানার পাশে মাটি খুঁড়ে পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, নিহত মোহাম্মদ আলী কৃষিকাজ ও মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। একমাত্র ছেলে রাজু অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। মাসখানেক আগে রাজুর স্ত্রী এক মাসের শিশুকে নিয়ে স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়ি চলে যান। রাজু জুয়ার টাকার জন্য প্রায়ই বাবা-মাকে নির্যাতন করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, অনলাইন জুয়ার টাকার জন্যই রাজু বাবা-মাকে হত্যা করে ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখেন।
ত্রিশাল থানার ওসি মুনসুর আহমেদ বলেন, ‘আটক রাজুর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঘরের মেঝে খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে এসে যতটুকু জানতে পেরেছি, রাজু অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিল। এই আসক্তির কারণেই তার স্ত্রী-সন্তান তাকে ছেড়ে চলে যায়।’
তিনি বলেন, অনলাইন জুয়ায় আসক্তি দমনে আমরা তৎপর রয়েছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে আমাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে।’