ময়মনসিংহের ত্রিশালে পাঁচ মাসের গর্ভবতী গরুর জিহ্বা কেটে বালতিতে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের সম্মুখ বৈলর নামাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম তুহিন তার ব্যক্তিগত আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওটি পোস্টের পর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি এক মিলিয়ন ভিউ, রিঅ্যাক্ট প্রায় ৫০ হাজার, কমেন্ট ৪ হাজার ২০০ এবং শেয়ার হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ বার।
নীরব পথিক নামে এক আইডি থেকে মন্তব্য করেন, ‘আল্লাহ, আপনি সবই পারেন, আপনি আপনার কুদরতি হাত দিয়ে গরুটি পুনরায় সুস্থ করুন, যেন তার জীবন চলার পথে কোনো বাধা না থাকে।’
চৌধুরী আনোয়ার মন্তব্য করেন, ‘যে দেশে মৃত ব্যক্তিকে কবর থেকে তুলে পোড়ানো হয় ও তা নিয়ে উল্লাস করা হয়, সেই দেশে আর কী আশা করা যায়! বড়ই কষ্টদায়ক ঘটনা ঘটছে, কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না। বড়ই নির্মম।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরুর জিহ্বা কেটে বালতিতে রেখে যাওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে বিস্ময় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, প্রাণীর প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
গরুর মালিক হরমুজ আলী বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমার মেয়ে এসে খবর দেয়—বালতির মধ্যে একটি জিহ্বা পাওয়া গেছে। পরে গোয়ালঘরে গিয়ে দেখি গরুর মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। আমার জানা মতে, আমার কোনো শত্রু নেই। গরুটি তো কোনো অপরাধ করেনি। আল্লাহ যেন এই নিষ্ঠুরতার বিচার করেন। পেটের বাচ্চার কথা চিন্তা করে পশু চিকিৎসকের সহযোগিতায় গাভীটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। আক্রান্ত গরুটি প্রায় পাঁচ মাসের গর্ভবতী। ঘটনার পর থেকে গরুটি তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে।’
আবুল হোসেন নামে স্থানীয় এক বৃদ্ধ বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ঘটনা কখনো দেখিনি। একটি বোবা প্রাণীর ওপর এমন অত্যাচার ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট কাজ। এটি শুধুমাত্র পশুর প্রতি নির্যাতন নয়, বরং মানবতার ওপর এক চরম আঘাত।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গাভীর জিহ্বা আংশিকভাবে কাটা হয়েছে। আমরা চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছি এবং গর্ভের বাছুরের জীবন রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
ত্রিশাল থানার ওসি মো. মনসুর আহমেদ বলেন, ‘ফেসবুকে ভিডিও দেখে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে, গরুর মালিকপক্ষ থেকে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন