ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫

রুলি বালায় গ্রামীণ নারীদের ফিরেছে সচ্ছলতা

খোরশেদ আলম রাজু , নওগাঁ
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৪, ০২:০৩ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভোরবেলা মোরগ ডাকার আগেই হাতুড়ীর টুংটাং শব্দে ঘুম ভাঙ্গে পশ্চিম বালুভরা গ্রামের গ্রামীণ নারীদের। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পশ্চিম বালুভরা গ্রামে পিতলের তৈরী বালায়  নকশা কাটার কাজ করে সংশারে সচ্ছলতা এনেছে গৃহবধূ  ফাতেমা, সেলিনা, সাবিনাসহ অসংখ্য নারী।

ছোট্ট হাতুড়ী আর ছেনির সাহায্যে বিভিন্ন কারুকাজ ফুটিয়ে তোলেন রুলি বালায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করলেও এরই ফাঁকে সংশারের কাজও সেরে ফেলে এসব নারীরা। একজন নারী টানা কাজ করলে ১২ থেকে ১৫ জোড়া বালা তৈরী করতে পারে। যার মজুরী ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। 

বালা কারিগর ফাতেমা দৈনিক রুপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমি এ কাজ ২০১৮ সাল থেকে শুরু করি শুরুর দিকে কয়েকদিন পার্শ্বের গ্রামের একটি কারখানায় প্রশিক্ষণ দেয় তারপর ধীরে ধীরে কাজের গতি বেড়ে যায়  বালা তৈরী করে আমি সংশারে অনেক কিছু করপছি তবে এখন আমি বালা তৈরী করিনা, আমি মাসিক বেতনে কাজ করি।

কিভাবে মাসিক বেতনে কাজ করেন এমনটা জানতে চাইলে ফাতেমা বলেন, আমি ডিস্টিবিউট করি মানে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন নারীকে নকশার কাজের জন্য বালা বিতরণ করি আবার কাজে শেষে হলে গুনগতমান যাচাই করে জমা নেয়। আমি আবার মহাজনকে হিসেব করে তার কারখানায় পাঠিয়ে দেয়। আমার মাসিক বেতন ১২ হাজার টাকা তবে এর পাশাপাশি দুই তিন জোড়া বালায় নকশা কাটার কাজ ও করি যা আমার বাড়তি আয় হিসেবে গন্য হয়। এই কাজ করে আমার এক সন্তানকে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা করানো মাসিক ডিপিএস এবং  ২ শতাংশ জমি ক্রয় করে নতুন ইটের বাড়ি করলাম।

আরেক গৃহবধূ সেলিনা বলেন, আমার স্বামী ভ্যান গাড়ি চালায় তার একক আয়ে সংশার চালানো খুব কষ্ট হয় আমি এই কাজ করার পর থেকে সংসারে এখন সচ্ছলতা এসেছে।

রাণীনগর উপজেলায় মোট ৫ থেকে ৬ টি কারখানা গড়ে উঠেছে যেখানে উপজেলার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় প্রায় ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে যারা অতীতে সংশারে নানা সমস্যায় অসচ্ছলতায় দিনাপাত করেছিল সেই নারীরা আজ সংশারে সচ্ছলতার আলো ফিরে পেয়েছে।

চকাদিন গ্রামের গৃহবধূ শাহানা বেগম রূপালী বাংলাদেশ কে বলেন, আগে আমি বাড়ির কাজ করার পর অন্য নারীদের সাথে খোশগল্পে সময় কেটেছে এখন আর সেই গল্প করার সময় নেই, আমাদের গ্রামের প্রায় সকল নারী এ পেশার সাথে জড়িত আমাদের গ্রাম এখন বালা গ্রাম নামেই পরিচিত।

নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার রনসিঙ্গার গ্রাম। এ গ্রামের এমদাদুল হক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ ২৩ বছর চাকুরী করার পর ২০১৩ সালে অবসরে যাওয়ার পর নাটোর,পার্বতীপুরে কয়েকমাস বালার উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে আমার নিজ বাসায় কয়েকজন নারীদের প্রাথমিক ধারনা দিয়ে কাজ শুরু করি এখন আমার কারখানায় প্রায় ৩০০ জন গ্রামীণ নারীদের কর্ম সংস্থান হয়েছে যারা মাসিক প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করে, এতে করে স্বামীর আয়ের পাশাপাশি এটি বাড়তি আয় হওয়ায় সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।

রাণীনগর উপজেলায় চকাদিন গ্রামের কামাল শেখ রনসিংঙ্গার গ্রামের এমদাদুল, এবং সায়েম শাহ সহ ৫ থেকে ৬ জন বর্তমান বালা কারখানার পেশার সাথে জড়িত। তাদের দেখাদেখি আরও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। সায়েম শাহ বলেন আমার কারখানায় মোটামুটি ৩৫০ জন নারী কর্মচারী কাজ করে একজোড়া বালা তৈরী করতে প্রায় ১১৫ থেকে ১২০ টাকা খরচ হয় বিক্রয় করা হয় ২৫০ থেকে ২৬০  টাকায়।

এগুলো কোথায় বিক্রয় করা হয় এমনটা জানতে চাইলে তিনি দৈনিক রুপালী বাংলাদেশ কে বলেন, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এই বালা বিক্রয় করা হয় তবে কেউ কেউ আবার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও রপ্তানি করছে।

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা বিসিক শিল্প নগরীর উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রাণীনগর উপজেলায় রুলি বালা তৈরির কয়েকজন উদ্যোক্তা আছে যাদের দ্বারা গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে তবে এখন পর্যন্ত কেউ আমার কাছে প্রশিক্ষণ নিতে আসেনি যদি কেউ আগ্রহী হয় অবশ্যই তাকে প্রশিক্ষণ দিব। সেই সাথে যদি কোন নারী উদ্যোক্তা ঋন নিতে চায় তাহলে খুব স্বল্প সুদে নারীদের ৫% এবং পুরুষ উদ্যোক্তাদের ৬% সুদে ঋন প্রদান করা হয়।