নড়াইলের সদর, লোহাগড়া ও কালিয়ায় খালবিল ও জলাশয় থেকে নির্বিচারে শামুক আহরণ করা হচ্ছে। কৃষিজমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। জলবায়ু দ্রুত বদলে যাচ্ছে। মৎস্য বিভাগের অবহেলাও রয়েছে। এসব কারণে পরিবেশবান্ধব জলজপ্রাণী শামুক এখন বিলুপ্তির পথে।
একসময় খাল-বিল, নদীনালা ও জলাশয়ে প্রচুর শামুক দেখা গেলেও বর্তমানে তা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। অথচ শামুক জলজ পরিবেশে ক্ষতিকর পোকামাকড় ও তাদের ডিম খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এ ছাড়া ফসলি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, জলজ পুষ্টিচক্র রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে শামুকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, মৎস্য বিভাগ শামুক সংরক্ষণে কোনো ধরনের তদারকি কিংবা সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। ফলে অনেকেই মাছের খাদ্য হিসেবে শামুক ব্যবহার করছেন, আবার অনেকে জীবিকার প্রয়োজনে শামুক আহরণ করে বিক্রি করছেন।
সদর উপজেলার বড়েন্দা এলাকার মৎস্যচাষি পলাশ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা ৩০ টাকা কেজি দরে শামুক কিনে মাছকে খাওয়াই। শামুকে জীবাণু থাকে এবং তা মাছের শরীরে ছড়ায়—এ বিষয়টা আমার জানা ছিল না। মৎস্য অফিস থেকেও কখনো কিছু বলা হয়নি।’
আরেক চাষি সবুজ মিয়া বলেন, ‘মৎস্য অফিস থেকে আমাদের এলাকায় কেউই আসে না। তারা আমাদের কোনো খোঁজখবর নেয় না।’
সিবানী বিশ্বাস নামে এক স্থানীয় নারী জানান, বর্ষাকালে প্রতিদিন সকালেই এলাকার অনেক নারী-পুরুষ বিল থেকে শামুক সংগ্রহ করেন। পরে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন মৎস্যচাষিদের কাছে। এতে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়।
কালিয়া উপজেলার এক দিনমজুর বলেন, ‘সংসার চালাতে খাল-বিল থেকে শামুক তুলে বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন ৫০০ টাকার মতো আয় হয়।’
সদর কালিয়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান বলেন, ‘মাছের খাদ্য হিসেবে শামুক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছি। কাঁচা শামুক মাছের শরীরে জীবাণু ও গ্যাস তৈরি করে। এসব মাছ খেলে মানুষের শরীরেও রোগ ছড়াতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, খাল-বিলে বেশি পরিমাণ শামুকের বিচরণ থাকার কারণে পানি ও মাটির উর্বরতা বাড়ে এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। শামুক মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার না করার জন্য ঘের মালিকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে জেলা মৎস্য বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান স্পষ্টভাবে বলেন, ‘শামুক সংরক্ষণে আমাদের কোনো কার্যক্রম নেই।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন