বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৫, ০৮:২১ পিএম

রাশিয়া গিয়ে যুদ্ধে বাংলাদেশি নিহত, মরদেহ ফেরত চায় পরিবার

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৫, ০৮:২১ পিএম

রাশিয়ায় সামরিক পোশাকে অস্ত্র হাতে সোহান। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাশিয়ায় সামরিক পোশাকে অস্ত্র হাতে সোহান। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়া গিয়ে রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে মারা গেছেন নরসিংদীর পলাশের যুবক সোহান মিয়া।তার মরদেহ ফেরত আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে পরিবার।

শনিবার (২১ জুন) বিকেল সাড়ে তিনটায় সোহানের বন্ধু জাফর সোহানের মাকে ফোন দিয়ে মৃত্যুর খবর জানান।

পরে ফোনে সোহানের মরদেহের ছবিও পাঠান জাফর। মৃত্যুর খবরে সোহানের বাড়িতে শোক নেমে আসে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে সোহানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার বাড়িসহ গোটা গ্রামে চলছে শোকের মাতম। চাকরির আশায় বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের সোহান মিয়া ও তার বোনের জামাই আকরাম মিয়া।

ইচ্ছা ছিল ইউরোপে গিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করবেন। সে জন্য ধারদেনা করে ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে দেশ ছাড়েন তারা। 

কিন্তু দালালচক্র তাদের রাশিয়া নিয়ে গেলেও তাদের কথামতো চকলেট কারখানায় কাজ না দিয়ে রাশিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয়। ফলে সে দেশে গিয়ে সোহানকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার জন্য অস্ত্রের প্রশিক্ষণে নামতে হয়েছে। তবে তার বোনজামাই আকরাম মিয়া কৌশলে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে বাড়ি ফিরে আসেন।

সোহান মিয়া পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মৃত সোহরাব মিয়ার ছেলে। পরিবারে তার মা নূরুন্নাহার ও স্ত্রী হাবিবা আক্তার এবং তার ১৬ মাসের ছেলে ফারহান রয়েছেন।

রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা সোহানের বোনজামাই সরকারচর গ্রামের কাজল মিয়ার ছেলে আকরাম মিয়া। 

সোহানের বড় চাচা রেজাউল আলম রিপন বলেন, ‘ঢাকার বনানীর ড্রিম হোম ট্রাভেলস থেকে জেরিন নামে এক দালালের মাধমে সাইপ্রাস যাওয়ার জন্য কাগজপত্র জমা দেন তারা। কিন্তু দীর্ঘদিন পর দালাল চক্র রাশিয়ার ভিসা করে দেন তাদের। পরে ২০২৫ সালের ২২ ডিসেম্বর ১০ জনের একটি দল রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।’

‘রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখানে তাদের ৪দিন রাখে। কিন্তু সোহানসহ আরও দুজনকে একদিন পরই সেখান থেকে নিয়ে যায় রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে। নিয়েই শুরু হয় দালাল চক্রের অত্যাচার। যুদ্ধের প্রশিক্ষণে যেতে সামরিক পোশাক দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ নিতে না চাইলে দেওয়া হয় হত্যার হুমকি, করা হয় মারধর, দেওয়া হয় না খাবার।’

‘পরে সোহান আকরামকে এগুলো জানায় এবং সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বলে। সোহানের দুদিন পর আকরামেরও যাওয়ার কথা ছিল। পরে সেখান থেকে আকরাম পালিয়ে গিয়ে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করে দেড় লাখ টাকা নিয়ে টিকিট কেটে গত ১৬ জানুয়ারি ফিরে আসে।

এদিকে খবর শোনার পর থেকে সোহানের মা নুরুন্নাহারের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। কতক্ষণ পরপরই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, ধারদেনা করে ৭লাখ টাকা দিয়ে তার একমাত্র ছেলেকে বিদেশে পাঠানো হয়। দালালচক্র সোহানকে রাশিয়ায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে নামিয়ে ছিল তার সন্তানকে।

তিনি বলেন, ‘সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল সোহান। এখন আমি কী করব?’

তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে কথা হতো, সে সারাক্ষণ কান্না করত দেশে আসার জন্য। কাল তার বন্ধু জাফর আমাকে জানায়, সোহানের শরীলে বোমা বিস্ফোরণ হলে সে মারা যায়।’

তার মা আরও বলেন, ‘আমি দালালদের গ্রেপ্তারসহ বিচার চাই, আর যেন তাদের খপ্পরে পড়ে কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’

সরকারের কাছে তার ছেলের লাশ ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন তিনি।

সোহানের স্ত্রী হাবিবা আক্তার বলেন, ‘উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছিল। সোহানকে ফিরিয়ে আনতে ড্রিম হোম ট্রাভেলসে যোগাযোগ করা হয়েছে অনেকবার। পুনরায় আড়াই লাখ টাকা নিয়ে বলেছিল জানুয়ারির ২৬ তারিখে এনে দেবে। কিন্তু আনা তো দূরের কথা! এখন সে লাশ হয়ে গেল।’

তিনি কান্না করতে করতে বলেন, ‘আমরা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করেছি, তারাও কিছুই করল না। এখন আমার একমাত্র ১৬ মাসের সন্তানকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব।’

‘আমি দালালদের বিচার চাই, শাস্তি চাই, আর আমার স্বামীর লাশ যেন দেশে আনার ব্যবস্থা সরকার করে। সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুবক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলে আমরা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সোহানের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। তার পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

Link copied!